নাইজেরিয়ার দর্শকদের অনুপ্রাণিত করল ‘হাসিনা : এ ডটারস টেল’

বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা মূল্যবান মাইলফলক হাসিনা : আ ডটার’স টেল। দেশজুড়ে লাখো দর্শকের মনজুড়ানো এই ডকুড্রামা সুনাম অর্জন করেছে বিশ্বজুড়ে।
গত বৃহস্পতিবার নাইজেরিয়ার আবুজায় নাইজেরিয়ান ফিল্ম কর্পোরেশন এবং নাইজেরিয়া সরকারের ফেডারেল ক্যাপিটাল টেরিটোরি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আয়োজিত আন্তর্জাতিক জুমা চলচ্চিত্র উৎসবে নাইজেরিয়ার আবুজায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন এই ডকু-ড্রামা প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
প্রদর্শনীতে কূটনীতিকবৃন্দ, বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, নাইজেরিয়ার সুশীল সমাজ ও শিক্ষার্থী, নাইজেরিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ ২৫০ জনেরও বেশি দর্শক উপস্থিত ছিলেন।
প্রদর্শনীর শুরুতে নাইজেরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আনিসুর রহমান উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করে তিনি বলেন, তাঁর (শেখ হাসিনা) গতিশীল নেতৃত্বে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর আলোকপাত করে হাইকমিশনের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) বিদোষ চন্দ্র বর্মন বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ার বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরেন।
দু’দেশের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সম্পর্কে আশাবাদ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ডকুড্রামাটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে দু’দেশের জনগণের মধ্যে ভাববিনিময়ের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। নাইজেরিয়ার প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক স্টিভ এবোহ বলেন যে, বাংলাদেশ এবং নাইজেরিয়া বহু বছর থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
তিনি আরো বলেন যে, ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’ প্রদর্শনী আগামী দিনে দু’দেশের বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
সমাপনী বক্তব্যে, নাইজেরিয়ান ফিল্ম কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নির্বাহী প্রধান এবং আবুজা আন্তর্জাতিক জুমা চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান ড. চিডিয়া মাডুয়েকওয়ে বলেন, বাংলাদেশ এবং নাইজেরিয়া উভয়ই জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে চলেছে। দুদেশ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন উপায় অনুসন্ধানের লক্ষ্যেও কাজ করে চলেছে বলে তিনি জানান।
তিনি আগামী প্রজন্মকে নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করার আহ্বান জানান। তিনি ডকুড্রামার সফল প্রদর্শনী কামনা করেন।
প্রদর্শনীর পরে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে অনুভূতি বিনিময়কালে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, অভিনয় শিল্পী এবং সাধারণ দর্শকরা ডকুড্রামাটি সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন যে, তারা এটি গভীরভাবে উপভোগ করেছেন। তার গল্প-কথন, শব্দ এবং সঙ্গীত ছিল অসাধারণ। গল্প ছুঁয়ে গেছে তাদের হৃদয়। মনের গহীনে রয়ে যাবে তার মর্ম।
ড. চিডিয়া মাডুয়েকওয়ে বলেন, ডকুড্রামাটি ছিল মর্মস্পর্শী এবং টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। সেটি ছিল সংগ্রাম, উৎসর্গ এবং সেবাব্রতের গল্প। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শুধু তাঁর পিতার আদর্শ লালন করেননি, তিনি তাঁর পিতার আদর্শে ব্রতী হতে তাঁর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত করছেন।
স্টিভ এবোহ বলেন যে, ডকুড্রামাটি ছিল আবেগ, চিত্র, শব্দ, প্রোডাকশন এবং ভালো গল্পের সমাহার। ডকুড্রামাটি বাংলাদেশের আত্মার সূক্ষাতিসূক্ষ রূপকে ধারণ এবং চিত্রায়িত করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নাইজেরিয়ান অভিনয় শিল্পী এবং স্ক্রিপ্ট লেখক গ্লোরিয়া অপেয়াগিয়েমি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রাম তাকে অনুপ্রাণিত করেছেন।
এর আগে পিপলু খান পরিচালিত ও সিআরআই ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও নসরুল হামিদ প্রযোজিত এই ডকুড্রামাটি গোয়ায় আয়োজিত ৫১তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। কলকাতায় তৃতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবেও এই ডকুড্রামা দর্শকদের নাড়া দিয়েছে।
৭৩ মিনিটের ডকুফিকশনটি বানাতে নির্মাতারা ৫ বছর ধরে গবেষণা, স্ক্রিপ্ট-রাইটিং, শুটিং এবং পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ করেছেন। এতে দেশের ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়, জাতির পিতার হত্যাকান্ডে পরে জীবন্ত অকথিত গল্প তুলে আনায় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেছে।
২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ও অমর একুশে বইমেলায় প্রদর্শিত হয়েছিল। এতে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রটির সহ-প্রযোজক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব। পরে তিনি দর্শকদের সঙ্গে ডকুড্রামা নির্মাণের গল্প তুলে ধরেন।
হাসিনা: আ ডটার’স টেলের শুরু হয় একটি ফোন কল দিয়ে। জার্মানিতে বসে হাসিনা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেই কলটি পেয়েছিলেন। সেখানে তাকে খবর দেয়া হয়েছিল কিছু পথভ্রষ্ট সেনা কর্মকর্তা তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পুরো পরিবারকে হত্যা করেছে। ওই ঘটনার সময় ইউরোপে দূরে থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা।