নাটোরে প্রাণ ফিরে পাবে নারদ নদ

দখল আর দুষণে মৃতপ্রায় নারদ নদ আবার প্রাণ ফিরে পাবে। খনন করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রণীত পরিকল্পনা চলছে যাচাই-বাছাই। একই পরিকল্পনায় থাকছে শহরের দশ কিলোমিটার জুড়ে নদের উভয় পাশে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। ব্লক দিয়ে পার বাঁধাই করে তৈরী করা হবে ওয়াকওয়ে, থাকবে ছায়াঘেরা বিশ্রামের আসন আর আকষণনীয় বৈদ্যুতিক লাম্প। শুধুমাত্র সৌন্দর্য বর্ধনের এ কাজেই ব্যয় করা হবে শত কোটি টাকা।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আল আসাদ জানান, এক হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বড়াল নদীক্ষেত্রে পানি সম্পদ পুনরুদ্ধার’ প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরী করা হয়েছে। এ প্রকল্প প্রস্তাবনায় ১০৫ কিলোমিটার বড়াল, ৪৩.৬৯ কিলোমিটার নারদ ও ৫.৫৯ কিলোমিটার মুসা খা নদীসহ তিনটি নদীর মোট ১৫৭ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। প্রকল্পে নদী খননের পাশাপাশি ৪৯টি অপরিকল্পিত ব্রীজ/কালভার্ট অপসারণপূর্বক পুনঃনির্মাণ এবং পদ্মা নদীর পানি পাওয়ার জন্যে চারঘাট পয়েন্টে অতিরিক্ত তিন ভেন্ট রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় একই সাথে নারদ নদে সৌন্দর্য বর্ধন কাজে শত কোটি টাকার কার্যক্রম বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

দেড়শ’ বছরের অধিক প্রাচীন নাটোর পৌরসভা এলাকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নারদ নদ শহরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। শহরের দশ কিলোমিটার এলাকায় নারদ নদের উভয় পাশে ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা হবে। নদের সীমানা চিহ্নিত করে দু’পাশেই থাকবে আট ফুট প্রশস্ততার টাইলসের ওয়াকওয়ে। ওয়াকওয়ে জুড়ে থাকবে অলংকৃত বৃক্ষরাজি আর সুশোভিত বৈদ্যুতিক ল্যাম্প। দৃষ্টিনন্দন ছাতার নীচে থাকবে বসার ব্যবস্থা। সৌন্দর্য বর্ধনের এ কাজে বাজেট ধরা হয়েছে শত কোটি টাকা।

নদী বাঁচাও আন্দোলন নাটোর জেলা কমিটির সভাপতি ফারাজী আহম্মদ রফিক বলেন, আমাদের শহরের প্রাণ নারদ নদ। নদীর প্রবাহ শহরকে সজীব রাখে। নারদ নদের শহর কেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে প্রাচীন ঐতিহ্যের এ শহর প্রাণ ফিরে নান্দনিক হয়ে উঠবে। সিএস খতিয়ান অনুসরণ করে নদীর সীমানা চিহ্নিত করে দখলমুক্ত রাখতে নিরবচ্ছিন্ন চলাচলের ব্যবস্থা এবং কারখানা, পৌরসভা ও গৃহস্থালী বর্জ্যরে দুষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান এ সংগঠক।

দৈনিক উত্তরবঙ্গ বার্তার সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মালেক শেখ বলেন, বিগত জানুয়ারি মাসে নারদের অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রমে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে ঐক্যমত্য লক্ষ্য করা গেছে। এ ঐক্য ধরে রেখে সম্মিলিতভাবে নদীকে বাঁচাতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে উন্নয়ন পরিকল্পনা।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু রায়হান বলেন, প্রকল্প প্রস্তাবনাটি বর্তমানে রাজধানীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডে রয়েছে। যাচাই-বাছাই কাজ শেষ করে দ্রুত এটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর পরিকল্পনা কমিশনে চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে শুরু হবে বাস্তবায়ন পর্যায়।

নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বড়াল বেসিনের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সর রকমের নিরবচ্ছিন্ন প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে বলেন, আমাদের সকলের লক্ষ্য বাসযোগ্য দর্শনীয় শহর হিসেবে নাটোরকে গড়ে তোলা।

নাটোর-২ আসনের (নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল বাসস’কে বলেন, নাটোরসহ সারা দেশের মানুষ নাটোরকে বনলতা সেনের মত দৃষ্টিনন্দন আদরনীয় শহর হিসেবে কল্পনা করে। নারদ নদের সৌন্দর্য বর্ধন কার্যক্রমের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণসহ শহর কেন্দ্রিক একাধিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবে রুপায়নের মধ্যে দিয়ে তাদের আকাংখা পূরণ সময়ের ব্যাপার মাত্র। মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে দ্রুত বড়াল বেসিন প্রকল্প অনুমোদনে আমার প্রচেস্টা চলমান রয়েছে। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান