নাটোরে সনেকাদের চোখে মুখে আনন্দ ধারা

উঠতি বয়সের সনেকা মানসিক ভারসাম্যহীন। খালা চন্দ্রভানুর সাথেই তার জীবন যাপন। খালার সাথে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদে এসেছে জমির দলিলসহ বাড়ি বুঝে নিতে। বোধগম্যতা আছে কিনা বোঝা যায়না। তবে তুমি একটা নতুন বাড়িতে যাচ্ছো, বলতেই হাত তালি দিয়ে ওঠে সনেকা। উপজেলার পীরজীপাড়া গ্রামে স্বামী পরিত্যক্তা চন্দ্রভানুর পেশায় ভিক্ষুক। অনিশ্চিত নিজের জীবনের জীবনের বোঝা বইবার সামর্থ্য নেই, কিন্তু সনেকাকে সাথে নিয়েই চলছে জীবন তরী। শ্রমিক ভাইয়ের খুপরী ঘর থেকে চন্দ্রভানু যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাঁকা বাড়িতে। তাই তাঁর চোখে আনন্দ অশ্রু।

নদীর পাড়ে পলিথিন আর পাটকাঠি দিয়ে ঘেরা শীর্ণ কুটির থেকে গোবরের দেলা তৈরীকারক লছিমুনও যাচ্ছেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের নতুন বাড়িতে। বাকরুদ্ধ লছিমুনের নীরব অভিব্যক্তি-‘জীবন হবে যে এত সুন্দর কখনো ভাবিনি আগে’।

পীরজীপাড়ার মরিয়ম স্বামীকে হারিয়েছেন ২০ বছর আগে। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পরে একটা কন্যার জন্মের আটদিনের মাথায় জামাই গেছেন নিরুদ্দেশে। আট বছর ধরে তিন প্রজন্মের বোঝা টানছেন মরিয়ম।মানুষের বাড়িতে কাজ করে দিন যায়, কিন্তু এখন আর শরীরে বল নেই। তাই একই কাজে নিয়োজিত তাঁর মেয়ে। ‘শেখ হাসিনাকে যেন আল্লাহ্ ভালো রাখেন’-নতুন বাড়ি পেয়ে উচ্ছ্বসিত মরিয়মের অভিব্যক্তি।

সনেকা, চন্দ্রভানু, লছিমুন আর মরিয়মসহ নাটোর সদর উপজেলা পরিষদে একত্রিত হয়েছেন উপজেলার দিঘাপতিয়া ও বড়হরিশপুর ইউনিয়নের হতভাগা ৫৭ পরিবার। আজ তাঁরা পাচ্ছেন দুই শতাংশ জমির দলিলসহ একটি করে সেমিপাঁকা বাড়ি। মধ্য বয়স অথবা জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে একটা করে নিজের ঠিকানা। সকলের চোখে মুখে আনন্দ অশ্রু, আনন্দ ধারা।

আর এসব ঠিকানা তৈরিতেঅক্লান্ত শ্রম আর মেধা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সারা এলাকায় তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করে এনেছেন এসব হৃতদরিদ্রদের নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ আফরোজা খাতুন আর সহকারী কমিশনার (ভূমি) রনী খাতুন। তাদের সহযাত্রী হয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা।

আফরোজা খাতুন বলেন, প্রকৃত হৃতদরিদ্র খুঁজে পেতে মানুষের আবাস থেকে আবাসে ছুটে বেড়িয়েছি। নীতিমালা অনুযায়ী বাড়ি তৈরীতে সর্বোচ্চ সময় দিয়ে মনিটরিং করেছি। কিছু এলাকার বাড়িগুলোকে বাসযোগ্য করতে বাড়ির আশপাশে ভূমি উন্নয়নও করে দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, আজ জেলায় ৯৯৪ পরিবার জমির দলিলসহ বাড়ির মালিকানা পাচ্ছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল বাংলার গরীব নিরন্ন মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার। এ লক্ষ্যে তিনি অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদে অন্তর্ভূক্ত করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব শতবর্ষে ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ লক্ষ্য পূরণে কাজ শুরু করেন। এ লক্ষ্য পূরণে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিতকল্পে দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে একক গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এরআগে নাটোর জেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে এক হাজার ৯৩৯টি গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান