নাটোর থেকে রাজধানীগামী আন্তঃনগর ট্রেন ভ্রমণের পরিধি বৃদ্ধি সময় হ্রাস

জেলায় কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের যাত্রা বিরতির মাধ্যমে উত্তর বঙ্গের প্রবেশ দ্বার খ্যাত নাটোর থেকে রাজধানীগামী আন্তঃনগর ট্রেন ভ্রমণের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে, হ্রাস পেয়েছে সময়। নাটোর থেকে যাত্রাপথে বিরতিহীনভাবে মাত্র চার ঘন্টাতেই এখন ঢাকা পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে। প্রতিদিন ট্রেন দু’টিতে নাটোরের জন্যে সংরক্ষিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও শোভন শ্রেণীতে মোট ৮২জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারছেন।
নাটোরে যাত্রা বিরতির মাধ্যমে নাটোর থেকে ঢাকাগামী দ্রুতগামী সম্পন্ন ট্রেন দু’টিতে ভ্রমণ কার্যক্রম শুরু হয় পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে। ঐ দিন নাটোর রেল স্টেশনে যাত্রীদের ভ্রমণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং নাটোর-২ (নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল। বাংলাদেশ রেলওয়ের নাটোর রেল স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী মোঃ আবু সাঈদ জানান, ঢাকাগামী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস দুপুর ১২ টা ২৪ মিনিটে নাটোর রেল স্টেশনে পৌঁছে তিন মিনিটের যাত্রা বিরতি শেষে পরবর্তী অন্য কোন স্টেশনে যাত্রা বিরতি ছাড়াই বিকেল ৫ টা ২৫ মিনিটে অর্থাৎ পাঁচ ঘন্টায় ঢাকা পৌঁছচ্ছে। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে নাটোরের যাত্রীদের জন্যে পাঁচটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কোচ এবং ৩৫টি শোভন চেয়ার কোচের টিকেট সংরক্ষিত।
অন্যদিকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস বিকেল ৫ টা ৪৯ মিনিটে নাটোর রেল স্টেশনে পৌঁছে তিন মিনিটের যাত্রা বিরতি শেষে পরবর্তী অন্য কোন স্টেশনে যাত্রা বিরতি ছাড়াই রাত ৯ টা ৫৫ মিনিটে অর্থাৎ মাত্র চার ঘন্টায় ঢাকা পৌঁছে যাচ্ছে। পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে নাটোরের যাত্রীদের জন্যে দুইটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কোচ এবং ৪০টি শোভন চেয়ার কোচের টিকেট রয়েছে।
এদিকে বর্তমান সময়ে অল্প খরচে দ্রুততম সময়ে নির্ঝঞ্জাট ও নিরাপদ ভ্রমণের মাধ্যম হিসেবে রেল ভ্রমণকে বর্ণনা করেছেন যাত্রীবৃন্দ। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের প্রথম যাত্রায় নাটোর রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে মিস্টি আর ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হওয়া যাত্রী পারভীন সুলতানা বলেন, পরিবারের সাথে ট্রেন ভ্রমণ অনেক আনন্দের। নাটোর থেকে এ ট্রেনের প্রথম যাত্রার যাত্রী হতে পেরে আমরা কালের সাক্ষী হয়ে রইলাম। সড়ক পথের তুলনায় অর্ধেক খরচে মাত্র ৩২০ টাকায় নিরাপদে ঢাকা যাওয়া যাচ্ছে, আবার জানজটের অনিশ্চয়তাও নেই বলে অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন বলে জানালেন অপর যাত্রী সোহেল রানা। যাত্রা পথে নতুন বাহন রোমাঞ্চকর বলে অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর এলপিআরে থাকা সহকারী মহাব্যবস্থাপক গোলাম ইখতিয়ার তাজু বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার নতুন ট্রেনে ঢাকা যাচ্ছি। তবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসন সংখ্যা বাড়ানো হলে পারিবারিক ভ্রমণ আরো উপভোগ্য হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন এ কর্মকর্তা। ই-টিকেট চালুকে যুগান্তকারী উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এখন বাড়িতে বসেই আগাম টিকেট করতে পারছি। আর নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শরীফুল ইসলাম শরিফ বলেন, নাটোর থেকে রেলযোগে যাত্রার পরিধি বৃদ্ধি পাওয়াতে ব্যবসায়ের পরিধিও বাড়বে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের নাটোর রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার অশোক কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, ইতোপূর্বে নাটোরের যাত্রীরা পাঁচটি আন্তঃনগর ট্রেন যথাক্রমে দ্রুতযান, লালমনি, নীলসাগর, একতা ও রংপুর এক্সপ্রেসযোগে রাজধানীতে যাতায়াত করছিলেন। ঐ পাঁচটি ট্রেনে মোট ১৫৮ জন যাত্রীর ভ্রমণ সুবিধা ছিল। কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন দু’টি নতুন সংযোজন হওয়াতে আরো ৮২জন যাত্রী ভ্রণন সুবিধা পাচ্ছেন। অর্থাৎ বর্তমানে ভ্রমণ পরিধি বেড়ে নাটোর থেকে প্রতিদিন মোট ২৪০জন যাত্রী সাতটি ট্রেনযোগে ঢাকা যেতে পারছেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল বাসস’কে বলেন, বর্তমান সরকার অল্প খরচে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে রেলপথের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এরমধ্যে নতুন রেলপথ স্থাপন, রেলপথের সম্প্রসারণ, রেল স্টেশনের উন্নয়ন, নতুন নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু, যাত্রীদের দূর্ভোগ লাঘবে ই-টিকেট চালু অন্যতম। আগামী দিনগুলোতে রেলযাত্রাকে আরো আকর্ষণীয় করার জন্যে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
সম্প্রতি বাস্তবায়িত উন্নয়ন পরিকল্পনায় নাটোর রেল স্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে সংসদ সদস্য শিমুল আরো বলেন, সকল বয়সী বিশেষ করে নারী ও শিশু এবং অসুস্থ যাত্রীদের ট্রেনে উঠানামাকে আরো সহজ করতে প্লাটফর্মকে উঁচু করে ট্রেনের মেঝের সমতলে নিয়ে আসার কাজ অচিরেই বাস্তবায়ন করা হবে।