নানামুখী সংকটে মৃৎশিল্পীরা

মাটি দিয়ে তৈরি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হয় এমন জিনিসপত্র ও সৌখিনতার বসে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কুমারের হাতে অতি যত্ন সহকারে তৈরি যে সব মাটির জিনিস ঘরের শোকেজে সাজিয়ে রাখা হয় সেগুলোই মৃৎশিল্প নামে পরিচিত।

একটা সময় গ্রাম বাংলার প্রতিটা ঘরের রান্না থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া অতিথি আপ্যায়নসহ প্রায় সব কাজই মাটি তৈরি পাত্র ব্যবহার করা হতো।

কুমারের হাতে অতি যত্ন সহকারে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা সমস্ত পাত্র ছিল খুবই সহজলভ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত। কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের ঐতিহ্যের এই মৃৎশিল্প।

ময়মনসিংহের নান্দাইলে সাড়ে চার লাখ মানুষের মধ্যে উপজেলা সদর ইউপির সাভার গ্রামের ১২ থেকে ১৫ টি পাল বংশের পরিবার তাদের বংশ পরস্পরায় মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

বিশ্বের আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক, মেলামাইন, সিরামিক, অ্যালুমিনিয়ামের যুগে তাদের এই মৃৎশিল্পের জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করা অনেকটা জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করার মতো।

সরেজমিনে দেখা যায়, নানামুখী সংকটের মধ্যেও নান্দাইল উপজেলার একমাত্র কুমার পল্লিতে মাটির তৈরি জিনিসপত্র তৈরি, পুড়ানো রং করার কাজের নানান ব্যস্ততা।

রত রঞ্জন পাল বলেন, করোনার জন্য গত দু’বছর ধরে মেলা, বান্নাী কোনো কিছুই হয় না। জিনিসপত্র তৈরি করেও সেগুলো আর বিক্রি করতে পারি নি। এতে অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়েছি।

সন্ধ্যা রাণী পাল বলেন, আমরা আমাদের বংশের ও নান্দাইলের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই মৃৎশিল্প ধরে রেখেছি। কিন্তু এগুলো তৈরি করে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে গেছে। মাটির তৈরি জিনিসপত্র তো আর এখন মানুষ কিনে না বললেই চলে। বাচ্চাদের জন্য কিছু খেলনা, পিঠা তৈরির কিছু পাতিল, দই তৈরির জন্য ভেটুয়া ছাড়া তেমন কিছু বানাই না।

ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন কাজল জানান, নান্দাইল উপজেলার একমাত্র কুমার পল্লি এটি। শত শত বছর ধরে তারা বংশগত ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে মৃৎশিল্পের কাজ ধরে রেখেছে। এখানে অন্তত ৪০টি পাল বংশের পরিবার মৃৎশিল্পের কাজ করতো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এ শিল্প এখন ধ্বংসের মুখে। এখন ১৫ টির মতো পরিবার কোনো মতে তাদের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। বাকীরা সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন চাকরিসহ ব্যবসা বাণিজ্য পেশায় মনোনিবেশ করেছে।

তিনি আরো বলেন, উপজেলার একমাত্র মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় অচিরেই এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন, ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করা হবে। খবর-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান