মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুই লাখের বেশি মানুষ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা ব্যাধিতে ভুগছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে এ কথা জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষ মায়ানমারে বিভিন্ন প্রতিষেধক টিকা থেকে বঞ্চিত ছিল। এ কারণে তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
স্ব্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৮ জন বিভিন্ন রোগে ভুগছে। এর মধ্যে ৫৩ হাজার ২০২ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত। এছাড়া পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩৫ হাজার ৬০৩ জন। চর্ম রোগে ভুগছে ২২ হাজার ৬৩৯ জন। বিভিন্ন ক্ষত নিয়ে ভুগছে ৬ হাজার ১৫৪ জন। চোখের সমস্যায় ভুগছে ১ হাজার ১৯০ জন। গর্ভাবস্থা ও মাতৃত্বকালীন জটিলতায় ভুগছে ৫৭২ জন। এর বাইরে রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর আরো প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যাধি ও জটিলতায় ভুগছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্র ও আশপাশের এলাকায় একদিকে ধুলাবালি, অন্যদিকে বৃষ্টি ও কাদাপানি। এ কারণে তারা শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কক্সবাজার সিভিল সার্জন আবদুস সালাম বণিক বার্তাকে বলেন, বৈরী আবহাওয়া এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে রোহিঙ্গারা সর্দি-কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষ এত দিন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। বিশেষত শিশুরা সব ধরনের রোগ-প্রতিরোধের টিকা থেকে বঞ্চিত। এ কারণে তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকদের প্রতিষেধক ছাড়াও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিশেষ ঝুঁকিগ্রস্ত ৬৪ হাজার ৪২০ জন। এদের মধ্যে ১৮ হাজার ২৩২ জন অন্তঃসত্ত্বা, ৪২ হাজার ৫৪১ জন স্তন্যদানরত মা। এছাড়া পঙ্গু রয়েছে ২ হাজার ৪৩১ জন, পিতা-মাতা বা অভিভাবকহীন শিশু ১ হাজার ২১৫ ও প্রবীণ ২৭ হাজার ১৮৫ জন।
এ পর্যন্ত আগতদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৮ জন, ৬-১৭ বছর বয়সী ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫১, ১৮-৫৯ বছর বয়সী ২ লাখ ২৯ হাজার ৭২১ ও ৬০ বছরের বেশি বয়সী রয়েছে ২৭ হাজার ১৮৫ জন।
জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত রয়েছে ৭৪টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এর মধ্যে ২৫টি সরকারি, ১০টি সেনাবাহিনী এবং ৩৯টি বেসরকারি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত। আশ্রিতদের চিকিৎসার জন্য ২১টি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫১৯ জন শিশুকে হাম-রুবেলা টিকা দেয়া হয়েছে। পোলিও টিকা খাওয়ানো হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৩৪ জনকে, ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে ৭২ হাজার ৬৪ জনকে, কলেরার টিকা দেয়া হয়েছে এক বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ৭ লাখ ৪৮৭ জনকে, এফটিএস পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ৫০ জনকে, ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করা হয়েছে ১০ হাজার ১০৮ জনের। এর মধ্যে চারজনের দেহে ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২২ অক্টোবর ২০১৭