নারী অফিসারদের নিয়োগ বন্ধ করতে চায় ভারত

সেনাবাহিনীর কমান্ডার পদে নারী সেনাদের নিয়োগ করা সম্ভব নয় বলে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীরা। এ নিয়ে ভারতের আদালতে শুনানি চলছে, আর দেশটির সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়।

বুধবার বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগীর ডিভিশন বেঞ্চও কেন্দ্রের এসব যুক্তি শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বিচারপতিদের মন্তব্য, সরকারের উচিত এ মনোভাব বদলানো। নারী অফিসারদেরও সুযোগ দেয়া উচিত।

আগামী সপ্তাহে এ মামলার রায় দেয়া হবে বলে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা জানিয়েছেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠায় বুধবার কেন্দ্রের পক্ষ সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা পরিস্থিতি সামলাতে সুপ্রিম কোর্টে বলেছেন, ‘এমন কিছু বলা হয়নি, যাতে মনে হয় পুরুষ সেনাসদস্যরা নারী অফিসারদের নির্দেশ মানবেন না।’

শুনানিতে ভারত সরকারের আইনজীবী নীলা গোখলে আদালতকে জানান, সেনা অফিসারদের কাজ খুবই কঠোর ও নিয়মানুবর্তী। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থা, মাতৃত্ব ও বাড়ির কাজে নারীদের যেভাবে ছুটিছাটা নিতে হয়, অফিসার পদে সে সব চলে না। অফিসাররা দেশের যেকোনো প্রান্তে বদলি হতে পারেন, নারী পদাধিকারী সেনাদের পক্ষে যা অসুবিধার। এ ছাড়া নারী অফিসাররা যুদ্ধবন্দী হলে সরকারের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে অসুবিধার কথা কেন্দ্র জানিয়েছে, তা হলো পুরুষ সেনাসদস্যরা নারী কমান্ডিং অফিসারদের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করতে পারেন।

তিনি আদালতকে জানান, অধিকাংশ সেনা সদস্যই গ্রাম থেকে আসেন। সামাজিক দিক দিয়ে শহরের মতো ‘মুক্ত হাওয়া’ গ্রামে বয় না। সেই সামাজিক অবস্থান থেকে উঠে আসা জওয়ানরা নারী অফিসারের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করলে বাহিনী শৃঙ্খলার সমস্যায় পড়তে পারে।

এদিকে, নারী অফিসারদের আইনজীবী মীনাক্ষী লেখি ও ঐশ্বর্যা ভাট্টি বলেন, ২০২০-এ সমাজের সর্ব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান দায়িত্ব ও গুরুত্ব নিয়ে কাজ করছেন। তারা এভারেস্টে চড়ছেন, চাঁদে পা রাখছেন, জঙ্গি বিমান চালিয়ে লড়াই করছেন, রোবট তৈরি করছেন। পুরুষতন্ত্রের নির্মাণ করা কাচের দেয়াল চুরমার করে সব ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন। সেখানে এ যুক্তি চলে না।

কিছুদিন আগে ভারতের উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান যখন আকাশে লড়াইয়ে পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান ভূপাতিত করেছিলেন, তার গাইড ছিলেন ফ্লাইট কন্ট্রোলার মিন্টি আগরওয়াল। কাবুলে হামলাকারী তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে সরাসরি লড়াই করে কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসকে রক্ষা করেছিলেন মিতালী মধুমিতা।

বীরত্বের জন্য সেবা পদক পেয়েছেন মিতালী। অসমসাহসিকতার জন্য যুদ্ধসেবা পদক পেয়েছেন মিন্টি আগরওয়াল। কোনো বিষয়ে যে তারা পুরুষ সেনাসদস্যদের চেয়ে পিছিয়ে নেই, একের পর এক ঘটনায় প্রমাণ করছেন নারী সেনাসদস্যরা। কিন্তু তার পরও কমান্ডারের পদে নারী সেনাদের নিয়োগ করা ‘সম্ভব নয়’ বলে সুপ্রিম কোর্টকে জানান কেন্দ্রের আইনজীবীরা। সূত্র- আনন্দবাজার ও স্ক্রল ডট ইন

আজকের বাজার/এমএইচ