নিজের বাড়ি না থাকায় পার্টি অফিসে উঠলেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী

সরকারি আবাসন ছেড়ে দিলেন ভারতের ত্রিপুরার রাজ্যের সদ্যবিদায় নেওয়া মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে স্ত্রী পাঞ্চালী ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে আবাসন ছাড়েন তিনি। দু’‌জনেই কিছুটা মনমরা। মন খারাপের কথা গোপনও করেননি তারা। বললেন, ২০ বছর আগে আমরাই তো মুখ্যমন্ত্রীর জিনিসপত্র হাতে হাতে বাড়িতে ঢুকিয়েছিলাম। আজ আবার আমরাই হাতে হাতে এগিয়ে দিয়ে বিদায় জানাচ্ছি।

ভারতের আগরতলায় মেলারমাঠে সিপিএম রাজ্য দপ্তরই এখন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ঠিকানা। ১৯৯৮ সালে যখন প্রথম এই বাসভবনে এসে উঠেছিলেন মানিক সরকার, তখন কিন্তু তিনি সিপিএম রাজ্য কমিটির সম্পাদক।

আগে আগরতলা কেন্দ্র থেকে একবার সংসদ সদস্য হলেও সেবার ভোটে ধনপুর কেন্দ্র থেকে জিতে এসেছিলেন। পার্টির নির্দেশে সরাসরি রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ২০ বছরের চেনা মুখ্যমন্ত্রীর আবাসনের সামনে দাঁড়ানো সাংবাদিকদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাও বলেন তিনি।

বলেন, আপনারা সবাই ভালো থাকুন। রাজ্যের সমস্ত মানুষকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বহুদিন আপনারা বিভিন্নভাবে আমায় সহায়তা করেছেন। কখনও হয়তো পরিস্থিতির চাপে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি, অপেক্ষা করতে হয়েছে। এগুলো মনে রাখবেন না। সবাই ভালো থাকুন।

১৯৮৮ সালে এমনই এক দিনে ত্রিপুরার আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী এভাবেই সরকারি বাড়িটি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সোজা পার্টি অফিসে। সাধারণ কিছু জামা-কাপড়ভরা একটি লাল স্যুটকেশ ছাড়া সেদিন কিছুই ছিল না তার হাতে।

তার মাথায় তখন নতুন দায়িত্ব। বিরোধী দলনেতার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন মনে মনে। পরে পার্টি অফিস থেকে তিনি ওঠে এসেছিলেন সংসদ সদস্যদের আবাসনের দোতলায়। একই পথে এগোচ্ছেন তার একনিষ্ঠ ‘‌রাজনৈতিক শিষ্য’‌ মানিক সরকার?‌

৩ মার্চ ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরই আবাসন ছাড়ার প্রস্তুতি শুরু করে দেন মানিক। স্ত্রী পাঞ্চালীকে জানিয়ে দেন আবাসন ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা। জিনিসপত্র তেমন কিছু নয়। তবে ছিল বেশ কিছু বই। আর গান শুনতে ভালোবাসেন।

ছিল বেশ কিছু গানের সিডি। ৪ মার্চ থেকে রাতটুকু ছাড়া মানিক সরকার রয়েছেন পার্টি অফিসেই। সেখানে বসেই গোটা রাজ্যে আক্রান্ত পার্টি কর্মীদের খোঁজ নিচ্ছেন। কোথায় কোন নেতা, কর্মীকে পাঠাতে হবে, কী করতে হবে তা পরিকল্পনা করছেন রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরকে সঙ্গে নিয়ে।

বিরোধী দলনেতার কাজ যে শুরু করেই দিয়েছেন, বোঝাই যায়। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়েছে, বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব তার ওপরেই বর্তাবে। সঙ্ঘ পরিবারের বহুমাত্রিক দাপটে ভেঙে পড়া বামফ্রন্টকে ফের দাঁড় করানোর গুরুদায়িত্ব তো তাকেই নিতে হবে।

সেই সঙ্গে একটু একটু করে গুছিয়ে নিয়ে গেছেন তার প্রিয় বইগুলো। পার্টি অফিসে যে ঘরটিতে তিনি আপাতত থাকবেন সেখানে এত জায়গা নেই। তাই আদরের বইপত্রের প্রায় সবটাই তিনি তুলে দিয়েছেন পার্টি অফিসের স্থায়ী লাইব্রেরিতে।

টানা ২০ বছর ধরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মানিক সরকার। ভারতের সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। গত ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজেপির কাছে পরাজিত হয় তার দল। এবার দায়িত্ব ছাড়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর বাংলোও ছেড়ে দিলেন তিনি।

আজকেরবাজার/এসকে