নির্বাচনে নিশ্চিত জয়ের পথে আবের রাজনৈতিক জোট

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তার দেশের জনগণকে গতকাল উত্তর কোরিয়ার হুমকি থেকে রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করার সময় তিনি এ প্রতিজ্ঞা করেন। খবর এএফপি।

নির্বাচনপূর্ব জরিপে দেখা গেছে, আবে ও তার কনজারভেটিভ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি আজকের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে আছে। নির্বাচনে জয়লাভ করলে কোরিয়ার বিরুদ্ধে তার যে কঠোর মনোভাব এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার নেয়া ‘আবেনমিকস’ প্রবৃদ্ধি কৌশল বাস্তবায়নের ব্যাপারে তিনি আবারো নতুন ও অধিক শক্তিশালী ম্যান্ডেট পাবেন।

জাপানের নিক্কেই ডেইলি সংবাদপত্রের নির্বাচনপূর্ব পূর্বাভাসে দেখা যায়, ৪৬৫ আসনবিশিষ্ট নিম্নকক্ষের পার্লামেন্টে আবের নেতৃত্বাধীন জোট প্রায় ৩০০ আসন পাবে। যদি এ পূর্বাভাস সঠিক হয়, তাহলে ৬৩ বছর বয়সী আবে হবেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ও এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্রপ্রধান।

প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা উপেক্ষা করে জমায়েত হওয়া সমর্থকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি ভীষণ কঠিন একটি নির্বাচন। ক্ষমতাসীন জোটই একমাত্র শক্তি, যেটি জনগণের জীবন রক্ষা করতে পারে এবং আমাদের সুখী ও সুন্দর জীবনকে সুরক্ষা দিতে পারে। এ বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে উত্তর কোরিয়ার উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া জাপানকে উদ্দেশ করে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং দেশটিকে সমুদ্রে ‘ডুবিয়ে’ দেয়ার হুমকি দিয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে আবে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এবং সে দেশের সরকারের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগে জোর দিয়েছেন। এছাড়া
তিনি এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে সমর্থন করে বলেছেন, ‘সব বিকল্প’ খোলা আছে। ১২ দিনব্যাপী এক সংক্ষিপ্ত প্রচারণা মিশনে প্রধানমন্ত্রী জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, এ রকম সময়ে আমরা টলে যেতে পারি না। আমরা কোনোভাবেই উত্তর কোরিয়ার হুমকি গ্রাহ্য করব না।

আবের জনসমর্থনের বিরুদ্ধে দুর্বল ও ভঙ্গুর প্রতিপক্ষ চলমান নির্বাচনী প্রচারণায় তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। দুটি প্রধান বিরোধী দল টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইকোর গঠিত পার্টি অব হোপ এবং নতুন মধ্যবাম কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি উভয়েই ভোটের লড়াইয়ে বেশ পিছিয়ে আছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দুটি দলই ৫০টি করে আসন পেতে পারে। শেষ নির্বাচনী সমাবেশে গতকাল সমর্থকদের উদ্দেশে কোইকো বলেন, আমরা এ রকম নির্বীর্য রাজনীতির পক্ষ নিতে পারি না। এ রাজনীতি দ্রুত ও প্রয়োজনীয় সংস্কার গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি বলেন, যদি আমরা এ সুযোগ (আবেকে উত্খাত) গ্রহণ করতে না পারি, তাহলে যেসব সংস্কার সত্যিই খুব প্রয়োজন, সেগুলো বিলম্বিত হবে।
উত্তর কোরিয়া ছাড়াও অনেক ভোটার দেশটির অর্থনীতি ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে আবে এ সংস্কারগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেননি।

এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আবে করহার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। তবে কোইকো বলছেন, সেটি হলে জাপানের প্রবৃদ্ধির গতি রোধ হবে। এ কারণে তিনি করহার কমাতে চান। তবে জনপ্রিয় এ মেয়র দল গঠনের পর নিজে প্রধানমন্ত্রীর পদে লড়বেন না— এ ঘোষণা দেয়ায় তার দলের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে।

অন্যদিকে নতুন গঠিত মধ্যবামপন্থী কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্র্যাট ভোটে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সেটি আবের সুনিশ্চিত জয় ঠেকাতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। বরং আবে ও তার জোট-মিত্র কোমেইতো দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাবেন কিনা, সেটি দেখার বিষয়। সেটি হলে আবে সংবিধান সংস্করণের অধিকার পাবেন। সেক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা সংবিধান সংস্কার করে জাপানকে ‘যুদ্ধ ঘোষণায়’ বাধ্য করতে পারেন।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২২ অক্টোবর ২০১৭