কাজী লুৎফুল কবীর: নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেয়া,নির্বাচনে সেনা মোতায়েন,নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করা,আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের সদস্যদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় পার্টি।
৯ অক্টোবর সোমবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে এসব প্রস্তাব দেয় দলটি। জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। সকাল ১১টায় শুরু হওয়া এ সংলাপে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার,সিইসি কে এম নুরুল হুদা।
সেনা মোতায়েন ছাড়াও জাতীয় পার্টির লিখিত প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- দলীয় প্রধানের সুপারিশের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভার সদস্য নিয়োগ করা, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনে কোনো বিতর্কিত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব না রাখা, নির্বাচনী ব্যয় সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে- সব খরচ তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করা, প্রচার কাজের গাড়িবহর সীমিত রাখার বিধান করা, বারবার সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ না করে ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা, নির্বাচনকালীন প্রয়োজনে সংবিধানের ধারা-উপধারা সংশোধন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিয়ে আসা।
এছাড়া নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনা করার বিষয়ে মত দিয়েছে দলটি।
বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে অন্তত: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা খুবই কঠিন ব্যাপার বলে মনে করে দলটি। এজন্য জাতীয় পার্টির একটি সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রস্তাব রয়েছে।
দলটি মনে করে আগের পদ্ধতিতে সন্ত্রাসী, মাস্তান, কালো টাকার মালিক, অর্থ ও বিত্তের জোরে রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দলীয় মনোনয়ন কিংবা নির্বাচনে জিতে আসার সুযোগ রয়ে গেছে। সৎ-বিজ্ঞ, ত্যাগী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনসেবা ও দেশসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জাপা মনে করে এখানে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থাই হচ্ছে দলীয় শাসন। আর গণতান্ত্রিক শাসনের মূল কথা হচ্ছে- সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেও দেখা যায় অনেক সময় সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন থাকে না। যেহেতু সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি যখন দলীয় শাসন ব্যবস্থা- সেক্ষেত্রে নির্বাচনও শুধু দলের ভিত্তিতে হতে পারে। অর্থাৎ ভোটারগণ দলকে ভোট দেবেন। সরাসরি প্রার্থীকে নয়। প্রত্যেক দল প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে সংসদীয় আসনের সদস্য পাবে। বর্তমানে বিশ্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত যেসব দেশে এই পদ্ধতি প্রচলন রয়েছে- সেসব দেশকে অনুসরণ করে এবং জাতীয় পার্টির প্রস্তাবিত নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার প্রস্তাব অনুসারে নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার করার প্রস্তাব পেশ করে।
জাতীয় পার্টির লিখিত প্রস্তাবে আরও বলা হয় সাংবিধানিকভাবেই সকল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই অনুযায়ী নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিরাই আসীন থাকবে। তবে এই রাজনৈতিক সরকারকে প্রমাণ করতে হবে-তারা নির্বাচনকালীন সময়ে সততা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে শুধু নিয়মতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কোনোভাবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবেন না। যদি কোনোভাবে তার ব্যতিক্রম হয় তাহলে জাতীয় পার্টি তা মেনে নেবে না। সেক্ষেত্রে জনমনে বিকল্প চিন্তা এসে যাবে।
প্রতিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জাতীয় পার্টির প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সকার ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে তা কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বলে মনে করে দলটি।
ইসি ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এর আগে গত ৩১ জুলাই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন কমিশন।
আগামী ১৮ অক্টোবর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ১৫ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৯ অক্টোবর ২০১৭