নির্বাচন না হলে ক্ষমতায় আসত তৃতীয় শক্তি

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হলে তৃতীয় শক্তি অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আসত বলে মনে করে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে বলে মনে করে উভয় দল।

দশম জাতীয় সংসদের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার ২৯ জানুয়ারি সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সরকারি ও বিরোধীদলের সদস্যরা এসব কথা বলেন।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি জোটকে বাদ দিয়েই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নানা নাটকীয়তার পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা পায় জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের আগে-পরে বিএনপি জোট ব্যাপক সহিংস আন্দোলন করলেও তা সফল হয়নি।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের পর ওই বছরের ২৮ জানুয়ারি প্রথম অধিবেশন বসে। সে থেকে আজ পর্যন্ত চার বছর পার হয়েছে। এ চার বছরে দশম জাতীয় সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ১২৮টি আইন পাস হয়েছে। পাশাপাশি ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাবসহ ১৪টি সাধারণ আলোচনার ওপর আলোচনার পর সেগুলো গৃহীত হয়েছে।

সোমবার সংসদে আলোচনা শেষে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া দশম জাতীয় সংসদের চার বছর পূর্তিতে বলেন, ‘আজ আমরা দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত পার করছি। এ সময়ে ২০১৪ সালে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রের বিজয় ছিনিয়ে আনার জন্য আমি সকল সংসদ সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই।’

ডেপুটি স্পিকার বলেন, তার জীবনে সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিক্রমায় এ পর্যন্ত যত সংসদ গঠিত হয়েছে, তার মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ সবচেয়ে অর্থবহ ও কার্যকর। এ সংসদে এ পর্যন্ত যত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবে থেকে যাবে।

ডেপুটি স্পিকার বলেন, ১৯৭০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইয়ুবের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিলেন। আর তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেমনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সফল করে দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করেছেন।

দশম জাতীয় সংসদের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ প্রথমে বিষয়টি আজ সংসদে উত্থাপন করেন।

এর পরই এ বিষয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিচক্ষণতা, প্রাজ্ঞতা, যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে ২০১৪ সালে সাংবিধানিক সংকট থেকে দেশকে উত্তরণের জন্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছিলেন। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে এখন আফসোস করছে, হতাশায় ভুগছে।

তোফায়েল বলেন, ‘ওই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। যারা প্রশ্ন তুলেছেন তাদের মধ্যে একজন ড. কামাল হোসেন, অথচ তিনিও একবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। আইপিইউ এবং সিপিএ-তে এই সংসদের সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গণতান্ত্রিক দেশের প্রতিনিধিদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরও তারা কীভাবে এই সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা বোধগম্য নয়।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেদিন বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এরপর খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর সহানুভূতি জানাতে প্রধানমন্ত্রী তার বাসায় গিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়।’

তোফায়েল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এখন বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শুনতে চায়। সামাজিক-অর্থনৈতিক অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে এগিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে ভারত থেকেও এগিয়ে রয়েছে।

পয়েন্ট অব অর্ডারে আরও বক্তব্য দেন সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুল মতিন খসরু, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও বিএনএফের এ এস এম আবুল কালাম আজাদ।

আজকের বাজার:এলকে/ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮