নির্বাচন বির্তক এড়াতে গণভোট চায় গণদল

নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে ওপৌনিবেশিক পদ্ধতি দাবি করে গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেছেন, কোটা প্রথার মাধ্যমে ঘুরে ফিরে নির্ধারিত কয়েকটি দলকে ক্ষমতায় আনার অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে। স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা কখনই ভাল ফল দেবে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। তিনি বলেন, নির্ধারিত কিছু নীতিমালার মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাঠামো ও কর্মকান্ড পরিচালিত হতে পারে। কিন্তু নিবন্ধনের নামে নিয়ন্ত্রণ করার কালো আইন বাতিল করতে হবে।

বুধবার ১৭ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টনে ফটো জার্নালিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ গণদলের প্রথম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গণদল চেয়ারম্যান বলেন, প্রয়োজনে নির্বাচনের ৩০ দিন আগ পর্যন্ত প্রাথমিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পরে কাঠামোগত নীতিমালা বাস্তবায়নের শর্ত পূরন হলে স্থায়ী নিবন্ধন দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে ইঙ্গিত করে মাওলা চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া বন্ধ করে,কালো টাকার প্রভাব মুক্ত নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। তা হলেই অনেকটা স্বচ্ছ নির্বাচন করা সম্ভব হবে।

নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার কথা উল্লেখ্য করে এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার আর ক্ষমতায় থাকার চরদখলের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করে গণমানুষের রায় নিন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংবিধানে গণভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন এবং জনগণের সামনে ছেড়ে দিন, নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি বেছে নিতে। গণভোটের মাধ্যমে গণমানুষের রায় নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা ঠিক করুন।

গণদল চেয়ারম্যান সরকার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন,নিত্যপন্য বিশেষ করে পেয়াজ-আলু শাকসবজি ও চাল-ডালের নিয়ন্ত্রনহীন মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনকে অস্থির করে তুলেছে। তারা দাবি করেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নির্বাচিত সরকার, কিন্তু বাজার ব্যবস্থা দেখলে তা তো মনে হয় না। উল্টো দেখা যায় আমলা ও বাহিনী নিয়ন্ত্রিত সরকার চলছে দেশে। তিনি বলেন, সে কারণেই এসব দেখবার কেউ নেই। যে যার মতো করে নিত্যপণ্যের দর বাড়িয়ে অসহায় মানুষের কষ্টের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর মুনাফা লোভিরা। তিনি বলেন, আর গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি তো ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হয় এটা না করলেই নয়।

অন্যদিক গণ পরিবহনে চলছে ব্যাপক নৈরাজ্য। নেই কোন সুষ্ঠু নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ। এটা যেন এখন আর সেবা নয়,বরং নাগরিক জীবনের বড় যন্ত্রনায় পরিনত হয়েছে। তিনি বলেন, কতিপয় মাস্তান আর মুনাফালোভিদের নির্যাতনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে গণপরিবহন ব্যবস্থা। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সুষ্ঠু গণ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহবান জানান গণদল চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, উন্নয়ন আর গণতন্ত্রকে এক সাথে মেলানো যাবে না। তাই সরকারকে দ্রুত গণমানুষের দাবির পক্ষে আসবার আহবানও জানান গণদল চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী।

প্রধান বক্তা হিসেবে দলের যুগ্ম মহাসচিব নুরুল কাদের চৌধুরী বলেন, শিক্ষা নাগরিক অধিকার, কিন্তু এখন শিক্ষায় চলছে বৈষম্য। বানিজ্যিক লাভের জন্য গড়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বৈষম্যের চুড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়েছে। চলছে শ্রেনী বিভেদ। উন্নত শিক্ষার নামে উচু-নীচুর পার্থক্যও করা হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। সরকারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন,কারো ক্ষমতা চির দিনের নয়, তাই আধিপত্য বিস্তারের চিন্তা -ভাবনা থেকে সরে আসুন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে আধিপত্য বিস্তার বন্ধ করুন। ডাকসুসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ গুলোতে নির্বাচন দিন। ছাত্র রাজনীতিকে প্রকৃত ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত হবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ভর্তি প্রক্রিয়া মেধা অনুযায়ী সহজ করুন। ভর্তিতে অনুদান আর টাকার প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে।

ক্ষমতায় গেলে গণদল অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে গণমানুষের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিনত করবে বলে জানান দলের যুগ্ম-মহাসচিব নুরুল কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, গণদল দেশের প্রতিটি সেক্টরে গণ মানুষের চাহিদার প্রতিফলন ঘটাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সারাদেশে দলকে শক্তিশালী করে আগামী দিনের সকল নির্বাচনে অংশ নেবে।

গণদল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো: শাহ আলম হাওলাদার, সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক তাইফুন নাহার রোজি, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা নুরুল কাদের, কাজী শামসুল ইসলাম, মহানগর নেতা বাবুল আহম্মেদ সহ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় এবং অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ।

আজকের বাজার:এলকে/১৭ জানুয়ারি ২০১৮