নেশা করা মধ্যবিত্তের ইতিহাস কোন দিকে?

আমাদের সমাজের যে মধ্য পরিসর সেটা ক্রমে ছোট হয়ে আসছে। স্বাধীনতার প্রথম ১০ বছর ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতার কাল। কী ধরণের রাষ্ট্র হবে সেটা নিয়ে চলে যুদ্ধ। তবে রাজনীতি ক্রমেই দুর্বল হতে থাকে যা কিনা একটি বিশ্বব্যাপী ঘটনা। ক্রমেই অর্থনীতি ভিত্তিক রাষ্ট্র- সমাজ গড়ে ওঠে। এই ধারা এখনও চলছে বা প্রতিষ্ঠিত।

আমাদের দেশ বা সমাজ কম বেশি বিত্তবানদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তারাই রাজনীতি, সমাজনীতি করে এবং সংস্কৃতি চর্চার তারাই পৃষ্টিপোষক। তারাই ঠিক করে কি হবে, কি চলবে, কি ঘটবে। আর তাদের আজ্ঞাবহ হিসেবে যারা কাজ করে, তারাই এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি। তারা ক্রমেই পরিণত হয়েছে একটি পরনির্ভর শ্রেণিতে। তাদের মধ্যে আত্মপ্রতিষ্ঠার আগ্রহ কম।

আমাদের ইতিহাসে সমাজ চলে আঁতাতের মাধ্যমে। বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে চলে এই আঁতাত। তাই বড়লোকের সাথে মধ্যবিত্তের এই সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজ আমলে যেমন ছিল, আজও তেমন আছে। যদিও ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত মিডল ক্লাসের দাপট লক্ষ্য করা যায়। সেটা ছিল মধ্যবিত্তের বড়োলোক হবার আকাঙ্খার দাপট। মুক্তিযুদ্ধে তাদের চেয়ে গ্রামের মানুষ, যারা মধ্যবিত্ত নয় তারা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু যুদ্ধের পর কিছু মধ্যবিত্ত ওপরে উঠে গেলো। আর ভালো থাকার জন্য বাকি মধ্যবিত্তরা তাদের ওপর নির্ভরশীল হলো। যে মধ্যের অর্থনৈতিক ভিত্তি নাই, তারা বাড়ে কিন্তু সবল হয় না। সেই কারণেই জিজ্ঞাসা করা দরকার এই শ্রেণি কি ইতিহাস ভিত্তিক না পুরাটাই সংস্কৃতির ওপর নির্ভরশীল?

গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক ভিত্তি আছে- রেমিট্যান্স ও কৃষি- তাকে কেউ উপেক্ষা করতে পারে না। কিন্তু মধ্যবিত্ত নাগরিকদের কেউ পাত্তা দেয় না। বড়লোকরা গ্রামের মানুষ নিয়ে চিন্তা করে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু মধ্যবিত্ত নাগরিককে পাত্তা দেয় না। এমনকি তাদের আন্দোলনকেও না। কিছু দিন যায়, তারপর শেষ হয়, এটাই বাস্তবতা। তালিকার সন্ধানে মশগুল এই মিডল ক্লাস ক্ষমতাহীন।

মধ্যবিত্ত নাগরিক তার জীবনের মূল্য বিচার করে জীবন যাপনের মাধ্যমে। তার এটা চাই, ওটা চাই, পশ্চিমা বা ভারতীয় রোল মডেলের মতো জীবন চাই। তাদের জীবন নেশা, দেহ আর অস্তিরতা দিয়ে গড়া। সাথে আছে সোশ্যাল মিডিয়া, বেঁচে থাকার আইডি কার্ড। কিছু করার চেয়ে কমেন্ট করতে, লাইক দিতে বেশি দেখা যায়।

যারা মিডিয়ায় আছে তাদের আমরা চিনি বলে ঘটনাগুলো সামনে আসে। কিন্তু এই মিডল অংশের বেশিরভাগই ভোগের বাইরে আর কোনো কিছুর সন্ধান করে না। তাই তাদের কেউ পাত্তা দেয় না। আর তাদের ভেতর যারা উন্নত কিসিমের, তারা চেষ্টা করে বিদেশ যেতে, সেখানে গিয়ে প্রায় বিলীন হয় অভিবাসী শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত হয়ে। তারা নিজের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়।

অতএব মদ খাওয়া আর ‘অনৈতিক’ জীবন নিয়ে এতো যে দুঃখ আর কথা সেটা তারাই করে যাদের ওর ভেতরেই বসবাস। এতো মামুলি কিছু নিয়ে ভাবার মানেই হয় না। এই দেশে যেখানে কম করে হলেও এক কোটি মানুষ মাদকে নেশাগ্রস্ত। আর সাথে মদ্যপায়ীদের যোগ করলে এই সংখ্যা কয় কোটি হবে? তাহলে ইতিহাস এখন কার কাছে? কারণ ইতিহাস তো হচ্ছে, থেমে নেই। কারা গড়ছে ইতিহাস? খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান