নোংরা ব্যাংক নোট থেকে করোনা ভাইরাস

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসটি চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যেই। তিন হাজার একশ ২৫ জনের মৃত্যু ঘটিয়েছে এই ভাইরাসটি, আর আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে নোংরা ব্যাংক নোট থেকে করোনা প্রাদুর্ভাব ছড়াতে পারে বলে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার রাতে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাটির পক্ষ থেকে সতর্কবার্তাটি পাঠানো হয়। একইসঙ্গে বিশ্ববাসীকে আপাতত নোটের বিকল্প ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এখানে বিকল্প বলতে নোটের পরিবর্তে ‘কন্টাক্টলেস পেমেন্টের’ কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ এড়াতে লোকজনের উচিত অবিলম্বে যেখানে সম্ভব যোগাযোগহীন প্রযুক্তি বা কন্টাক্টলেস টেকনোলজি ব্যবহার করা। তাছাড়া ব্যাংক নোট স্পর্শ করার পর সবাইকে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে। কেননা এসব নোটে কয়েকদিন পর্যন্ত মানব দেহে এ ভাইরাস সংক্রমণের মতো উপাদান থাকতে পারে।

এ দিকে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে’ থাকা নোটগুলোতেও ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের উপাদান থাকতে পারে বলে আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের। তাই ব্যাংকটির পক্ষ থেকে নিয়মিত সবাইকে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে করোনার বিস্তার প্রতিরোধে দিনে অন্তত দুইবার স্মার্টফোনের স্ক্রিন পরিষ্কার করার অনুরোধও করা হয়েছে। অপরদিকে করোনা আতঙ্কে বিশ্বের ১০টিরও বেশি রাষ্ট্রের লাখো শিশুর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি চীনজুড়ে স্কুল বন্ধ রাখায় দেশটির প্রায় দুই কোটি শিশু গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। বর্তমানে থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, জাপান, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতসহ বেশকিছু দেশে অজ্ঞাত এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। তাছাড়া আতঙ্কে রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানও। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও ভাইরাসের তাণ্ডব শুরু হয়েছে। আক্রান্তদের সবাই সম্প্রতি চীনে ভ্রমণ করেছেন কিংবা সেখানে বসবাস করেন। এছাড়া এ তালিকায় আরো রয়েছে কাতার, চেকপ্রজাতন্ত্র, জর্জিয়া, আইসল্যান্ড, রুমানিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাম্বোজ, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, আয়ারল্যান্ড, লিত্ভা, লুক্সেমবার্গ, উত্তর ম্যাসেডোনিয়া, মোনাকো, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও শ্রীলংকা।

এমনকি সিঙ্গাপুরেও কয়েকজন বাংলাদেশির করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তারা সকলেই বর্তমানে দেশটিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানেও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ ভাইরাস মানুষ ও প্রাণীদের ফুসফুসে সংক্রমণ করতে পারে। ভাইরাসজনিত ঠান্ডা বা ফ্লুর মতো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস। এ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার প্রধান লক্ষণগুলো হলো- শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিষ্ক্রিয় হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় এখনো কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা। তাই মানুষের শরীরে এমন উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা।

আজকের বাজার/শারমিন আক্তার