নড়াইলবাসীর স্বপ্নের কালনা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে

জেলাবাসীর স্বপ্নের কালনা সেতুর নির্মান কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি মধুমতি নদীর কালনা এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি হবে ছয় লেন বিশিষ্ঠ । সেতুর পাইলিং এর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শুরু হয়েছে সংযোগ সড়কের কাজ। প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের মধ্যে এটি প্রথম ভিন্ন ধরনের দৃষ্টিনন্দন ও ব্যতিক্রমী সেতু হবে।

সড়ক ও জনপথ(সওজ)বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় সেতুর কাজ চলছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক হবে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সির(জাইকা)অর্থায়নে এ সেতু হচ্ছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার।

জানাগেছে, এ সেতু চালু হলে উভয় পাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। এটি এ এলাকার মানুষের স্বপ্নের সেতু। এখানে সেতুর দাবিতে যুগ-যুগ ধরে বহু আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নড়াইলের নির্বাচনী জনসভায় এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মধুমতী নদীর কালনা ফেরিঘাটের লাগোয়া দক্ষিণে হচ্ছে সেতুটি। চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। নদীর পূর্বপাড়ে সংযোগ সড়ক করতে বালু ভরাটের কাজ চলছে। চলছে নদী পাড়ের পিলার নির্মাণের কাজ। নদীতে চলছে পাইলিংয়ের কাজ। কয়েকজন জাপানি প্রকৌশলী সার্বক্ষণিক কাজ তত্ত্বাবধান করছেন। আছেন আবদুল মোমেন লিমিটেড ও সওজের প্রকৌশলীরা। এসব প্রকৌশলীরা জানান, সব মিলে প্রায় তিন’শ জনবল এখানে কর্মরত রয়েছে। সেতু থেকে ১ কিলোমিটার দূরে কাশিয়ানী উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে ঠিকাদার এবং সওজের কার্যালয় ও বাসভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

সওজ ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ সেতু চালু হলে নড়াইল, যশোর, বেনাপোল স্থলবন্দর ও খুলনা থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী পরিবহন মাগুরা, ফরিদপুর হয়ে যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা হয়ে যাতায়াত করতে পারবে। এতে বেনাপোল-ঢাকা ও যাশোর-ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কিলোমিটার, খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার কমবে। একইভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর যশোরের নওয়াপাড়া ও মোংলা বন্দর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য জেলার দূরত্বও কমে যাবে।

সওজের এ সেতুর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন জানান, ২০১৮ সালের ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই সালের ৫ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তখন থেকে ৩৬ মাস তথা ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঠিকাদারকে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। গত বছর ২৯ মার্চ থেকে মূল সেতুর পাইলিং কাজ শুরু হয়েছে। সেতুতে মোট ২৭২টি পাইলিংয়ের কাজ রয়েছে, তার মধ্যে কাজ বাকি রয়েছে ৩০টি। সেগুলোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সেতুতে মোট ১৪টি পিলারের ওপর বসানো হবে ১৩টি স্প্যান। ৫টি পিলার হবে নদীর মধ্যে। এর জন্য সেখানে লাগবে ১২৪টি পাইলিং। এর ১৮টি বাকি রয়েছে, সেগুলোরও কাজ চলছে।

সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, সংযোগ সড়কের জমি বুঝে পেতে দেরি হওয়ায় সেটির কাজ শুরু হয়েছে দেরিতে। এ জন্য একটু পিছিয়ে আছি, তবে এটি কভার করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাব্যক্ত করেন। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান