নড়াইলে চিংড়ি চাষিদের ১০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা

বিশ্ব বাজারে গলদা চিংড়ির দাম কমায় এবং চিংড়ির রেণু মারা যাওয়ায় জেলার কালিয়া উপজেলার প্রায় ৮০০ গলদা চিংড়ি চাষি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে মূলধনের ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত লোকসান গুনছে চাষিরা।

চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এলাকায় কোন মাছের হ্যাচারি না থাকায় চিংড়ির রেণু আনতে হয় বরিশাল এবং ভোলা থেকে। ফলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসা রেণু ১০ থেকে ২০ শতাংশ মারা যায় প্রতি বছর। কিন্তু এ বছর বেশি পরিমাণে মারা গেছে। লাখে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার রেণু মারা গেছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে তারও দাম কম থাকায় চাষিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। প্রতি কেজি মাঝারি গ্রেডের চিংড়ি ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা এবং ছোট গ্রেডের চিংড়ি ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চাঁচুড়ি গ্রামের চিংড়ি চাষি তৌরুত মোল্যা জানান, আমার ২টা ঘেরে দেড় লাখ রেণু ছেড়েছিলাম। কিন্তু মাত্র ৬০-৬৫ হাজার মাছ পেয়েছি। মাছের বৃদ্ধিও কম। ২০-৩০টা চিংড়িতে ১ কেজি হয়েছে -যেখানে ৮ থেকে ১৫টায় কেজি হবার কথা। বেশী দামে খাদ্য কিনে মাছ উৎপাদনের পর কম দামে মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে। আমার প্রায় ৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

ফুলদা গ্রামের রাজিব মোল্যা বলেন, এবার ভালো রেণু আসে নাই। বেশিরভাগ মাছই মারা গেছে। যে পরিমাণ মাছ ছেড়েছি সে হিসেবে খাবার দিয়েছি। কিন্তু শেষকালে অনেক কম মাছ পয়েছি বলে ক্ষতির পরিমান বেড়ে গেছে। আমার প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

কৃষ্ণপুর গ্রামের রেণু ব্যবসায়ি মদন বিশ্বাস বলেন, রেণুতে কোন সমস্যা ছিলো না। আসলে এবছর অতি বৃষ্টির কারণে মাছের বৃদ্ধি ভালো হয়নি।

উপজলোর চাঁচুড়ি গ্রামের তমজিদ বিশ্বাস, কৃষ্ণপুর গ্রামের মিলটন কাজী, কদমতলা গ্রামের আশিকুল ইসলামসহ অনেকের সাথে আলাপকালে জানা যায়, দাম কমে যাওয়ার কারণে অনেকে এখনও ঘেরের মাছ ধরেনি। এভাবে চলতে থাকলে চিংড়ি চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে চাষিরা। আগামীতে অনেকেই কৈ মাছের চাষ করবে। কৈ মাছ বছরে ৩ থেকে ৪ বার বিক্রি যায় এবং অপেক্ষাকৃত লাভজনক।

সরেজমিনে একাধিক চাষির সাথে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমাদের কোন খোঁজ খবর নেয় না। অফিসে গেলে তাকে প্রায়ই পাওয়া যায়না। পেলেও ভালো কোন পরামর্শ দেয়না। মাছের ঘের পরিদর্শনে তো আসেই না।

এ বিষয়ে চাঁচুড়ি বাজারের ফিস ফিড ব্যবসায়ি খসরুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, সঠিক দিক-নির্দেশনার অভাবে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মৎস্য কর্মকর্তরা চাষিদের নিয়ে কোন ধরনের মিটিং করে না বা প্রশিক্ষণ দেয়না। বিভিন্ন মৎস্য খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বছরে দু’একবার চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়। আমাদের এলাকার চিংড়ি চাষিরা ওই পরামর্শ অনুযায়ী চাষ করে থাকে।

এ প্রসঙ্গে কালিয়া উপজলো মৎস্য কর্মকর্তা রাজিব রায় বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সত্য নয়। চাষিদেরকে আমরা সব ধরণের পরামর্শ দিয়ে থাকি। বৃষ্টির কারনে মাছের বৃদ্ধি না হবার কোন কারণ নেই। তবে রেণু মারা যাওয়ার ব্যাপারটা আমার জানা নেই। এছাড়া বর্তমানে বিশ্ববাজারে চিংড়ির চাহিদা কম তাই দরপতন হয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে। এদের কারণেও বিশ্ব বাজারে আমাদের চিংড়ির চাহিদা অনেকটা কমেছে।

আজকের বাজার : এলকে/ ২ জানুয়ারি ২০১৮