মূল সেতুর কাজ এগিয়ে চললেও পিছিয়ে বিলম্ব হচ্ছে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত ঋণ চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও চুক্তিটি এখনও হয়নি।
তবে দ্রুত সম্ভব চুক্তিটি করতে চীন সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি ত্বরান্বিত করতে সাত সদস্যের এক প্রতিনিধি দল চীন সফর যাচ্ছেন। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে থাকছেন ইআরডি সচিব কাজী সফিকুল আজম, অতিরিক্ত সচিব জাহিদুল হক এবং রেল সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেনসহ অন্যরা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি)বরাত দিয়ে দেশের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির কাজ ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন সময়ে চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করার পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এখনও আমরা সেই চুক্তি করা হয় নি।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া উইং প্রধান) জাহিদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, যথা সময়ে প্রকল্পটির কাজ ত্বরান্বিত করতে গত বছরের মাঝামঝি সময় থেকে আমরা চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করি। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের কথা থাকলেও এখনও আমরা সেই চুক্তি করতে পারিনি।
তবে তিনি বলেন, আমরা এখনও আশাবাদী আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ চুক্তি হতে পারে।
ইআরডির আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে খবরে বলা হয়েছে, চীন সরকার শেষ মুহূর্তে আমাদের জানিয়েছে, এটি অনেক বড় বিনিয়োগ প্রকল্প হওয়ায় তাদের আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত চুক্তির আগে চীনের স্টেট কাউন্সিলের অনুমোদন নিতে হবে। ওই প্রক্রিয়া করতে গিয়ে নির্ধারিত সময়ে চুক্তি করা সম্ভব হয়নি।
তিনি জানান, সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি ত্বরান্বিত করতে আগামী ২১ জানুয়ারি সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের চীন সফরে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি সার সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। ওই অনুমোদন পেলেই প্রতিনিধি দল চীন সফর যেতে পারে।
তবে ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেছেন, সফরের প্রস্তাব করা হয়েছে মাত্র, এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সফরে এখনও চুক্তি না হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থায়ন চুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হবে বলেও জানান ইআরডি সচিব।
উল্লেখ, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ভাঙ্গা, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেল সংযোগ প্রকল্পে অর্থায়নে ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিংয়ের ঢাকা সফরের সময় যে ২৭টি প্রকল্পে অর্থায়ন চুক্তি হয় এটি তার একটি।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকারের ঋণ দেওয়ার কথা ৩১৩ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেওয়ার কথা।
এদিকে সড়ক সেতুর কাজ এগিয়ে পদ্মা সেতুতে স্প্যান বসলেও পিছিয়ে পড়েছে রেল প্রকল্পের কাজ সড়ক সেতুর কাজ এগিয়ে পদ্মা সেতুতে স্প্যান বসলেও পিছিয়ে পড়েছে রেল প্রকল্পের কাজ। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সড়ক সেতু চালুর দিন থেকেই রেল চলাচলও উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
ওই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে রেল মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠায়। তাতে বলা হয়েছিল ২০১৯ সালে পদ্মায় রেল সেতু উদ্বোধন করতে হলে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করতে হবে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, জানুয়ারি ২০১৭ হতে কাজ শুরু করে এ বছরের শুকনো মৌসুমের মধ্যে আড়িয়াল খাঁ সেতুসহ অন্যান্য রেলসেতুর ফাউন্ডেশন নির্মাণ করা সম্ভব না হলে পদ্মা সেতু চালুর দিন হতে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এরই মধ্যে রেলের চুক্তি না হওয়ায় এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ২৭ ডিসেম্বর ইআরডির কাছে চিঠি পাঠিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই চীন সফরের উদ্যোগ নেওয়া হল।
আজকের বাজার:এলকে/ ৯ জানুয়ারি ২০১৮