পরস্পরকে পাগল বললেন ট্রাম্প-কিম

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন পরস্পরকে পাগল বলে আখ্যায়িত করেছেন। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘে ট্রাম্পের ভাষণের পর তার সঙ্গে উনের কথার যুদ্ধ নতুন মাত্রা পেয়েছে।

গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের ওই ভাষণের কারণে তাকে ‘উন্মাদ’ আখ্যায়িত করেন কিম। এর জবাবে গতকালই টুইট করে ট্রাম্প বলেছেন, কিম ‘পাগল ছাড়া আর কিছু না’।

উন বিবৃতিতে বলেন, ট্রাম্পের কাছ থেকে তার ভাষণের চরম মূল্য আদায় করতে উত্তর কোরিয়া নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে এর কঠোর পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন, ‘উন্মাদ’ ট্রাম্পের হুমকিতে অস্ত্র উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ না করে তিনি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।

উন প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আগুন বর্ষণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মানসিক বিকারগ্রস্ত এই বৃদ্ধকে আমার হাতের মুঠোয় আনব।

কিম বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্য আমাকে আতঙ্কিত করা বা থামানোর পরিবর্তে আমাকে এটা বুঝিয়েছে যে, আমি সঠিক পথই বেছে নিয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত আমাকে এই একটি মাত্র পথেই চলতে হবে।

তিনি বলেন, সারা বিশ্বের চোখের সামনে ট্রাম্প আমাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করে এবং আমাকে ও আমার দেশকে বিচ্ছিন্ন করে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্করভাবে একটি যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।

উনের এই বিবৃতির পরে ট্রাম্প হতকাল টুইট করে বলেন, কিম ‘পাগল ছাড়া আর কিছু না’। তার নিজের দেশের মানুষ না খেয়ে থাকলো নাকি মারা গেল তাতে তার কিছু যায় আসে না। তাকে এমন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে যা কিম কখনও দেখেননি।

উল্লেখ, গত মঙ্গলবার জাতিসংঘে দেওয়া নিজের প্রথম ভাষণে ট্রাম্প বলেছিলেন, যদি আমেরিকাকে নিজেদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করা হয় তবে তারা উত্তর কোরিয়াকে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করে দেবে। তিনি কিমকে ‘আত্মঘাতী মিশনে থাকা রকেট ম্যান’ বলেও ব্যঙ্গ করেন।

তবে ওই দিনই কিম সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় কোনো নিষেধাজ্ঞাই উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটাতে পারবে না। তাদের এই উদ্যোগ বন্ধের চেষ্টায় এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা ও চাপ কর্মসূচিকে আরও গতিশীল করবে বলে সতর্ক করে দেশটি।

এর আগে গত শুক্রবার উত্তর কোরিয়া জাপানের ওপর দিয়ে তাদের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এটি ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে। এ ঘটনাকে অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ও আপত্তিকর উল্লেখ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে নিন্দা প্রস্তাব করা হয়।

তারও আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের আরোপ করা সর্বশেষ নতুন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করেছে উত্তর কোরিয়া। একই সঙ্গে এই নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব উত্থাপনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে শিগগিরই ‘বড় ধরনের কষ্ট’ দেওয়ার হুমকি দেন কিম জং উনের সরকার।

মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘ আয়োজিত এক সম্মেলনে পিয়ংইয়ংয়ের রাষ্ট্রদূত হান তায়ে সং বলেন, উন্নতির প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হওয়া উত্তর কোরিয়ার পরমাণু উন্নয়ন কার্যক্রমের লাগাম টেনে ধরার আদিম খেলায় মত্ত যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সংঘাতের কারণে ধ্বংস হবে।

তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে যে ইতিহসি কখনও তা দেখেনি।

উত্তর কোরিয়ার ষষ্ঠতম এবং বড় ধরনের পরমাণু পরীক্ষার পর জাতিসংঘ নতুন করে অবরোধের পদক্ষেপ নিল। কয়লা, সিসা এবং সামুদ্রিক খাবারের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়ার তেল রপ্তানিসহ নতুন করে আরও অবরোধ আরোপের প্রস্তাব করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রস্তাবও জাতিসংঘে পেশ করে দেশটি।

তারও আগে গত আগস্টেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পিয়ংইয়ংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জোরদারে মার্কিন খসড়া প্রস্তাবের বিষয়ে সায় দেয়। যার ফলে দেশটির কয়লা এবং লোহা রপ্তানি খাত ১০০ কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়ে।

বিভিন্ন অবরোধ আরোপ করেও উত্তর কোরিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা যায়নি। নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের আগে পিয়ংইয়ং একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, তারা তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বৃদ্ধি করা অব্যাহত রাখবে।

আজকের বাজার: এলকে / এলকে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭