পরিত্যক্ত পাহাড়ে মিশ্র ফলজ বাগান করে সফল জীনবোধি মহথেরা

ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি পরিত্যক্ত পাহাড়ে মিশ্র ফলজ বাগান করে সফল হয়েছেন রাঙ্গামাটির দূর্গম শুকরছড়ির বোধিপুর বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ও ত্রিশরণ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু জীনবোধি মহথেরো।
জীনবোধি মহাথেরো বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) কে বলেন, ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি এলাকার বেকার মানুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং ফলের চাহিদা মিটাতে তিনি পরিত্যক্ত পাহাড়ে ত্রিশরণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০০৭ সালে প্রথমে প্রায় ৫একর জমিতে মিশ্র ফলজ বাগান করা শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি এ মিশ্র ফলজ বাগান করে সফল হয়েছেন বলে জানান। প্রথম পর্যায়ে গড়া মিশ্র ফল বাগানের সফলতা দেখে তিনি একই এলাকায় আরো প্রায় ৫ একর পরিত্যক্ত পাহাড়ে নতুনভাবে গড়ে তুলছেন মিশ্র ফলজ বাগান। মিশ্র ফলজ বাগানের পাশাপাশি কৃষক সেখানে সবজি চাষ ও করে লাভবান হচ্ছেন।
বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু জীনবোধী মহাথেরো জানান, তার উদ্যোগে পরিত্যক্ত পাহাড়ে গড়ে উঠা মিশ্র ফলজ বাগানে রয়েছে রয়েছে দেশী-বিদেশী ১২ প্রজাতির বিভিন্ন আম, ড্রাগন ফল,মাল্টা,আপেল কূল, লিচু, কলা,ডালিম, পেয়ারা,আমড়া, নারকেল, সুপারী, বিলুপ্ত হওয়া বাশঁ বাগানসহ ফলজ, বনজ ও ওষুধী গাছের সমারোহ।
তাছাড়া তিনি পাহাড়ে মিশ্র ফলজ বাগান করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন প্রজাতির চারাও উৎপাদন করছেন। তার সৃজিত বাগানের ফল সুমিষ্ট হওয়ায় সেখান থেকে বিভিন্ন প্রকার ফল ও চারা সংগ্রহ করছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ এলাকার মানুষ। একজন ধর্মীয় গুরুর মিশ্র ফল বাগানের সফলতার কথা শুনে সে বাগান দেখতে এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ মানুষ ও কৃষক প্রায়ই ছুটে আসেন। ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি পাহাড়ের পরিত্যক্ত জমিতে মিশ্র ফলজ বাগানের সফলতা দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষক ও গড়ে তুলছেন মিশ্র ফলজ বাগান।
ত্রিশরণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু জীনবোধি মহাথেরোর বাগান দেখে একই এলকার হেমরঞ্জন চাকমা ও গড়ে তুলেছেন মিশ্র ফলের বাগান। তার বাগানে ও এখন শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির আম, নারকেল, সুপারি,চেরী ফল,ডালিমসহ বিভিন্ন ফল।
রাঙ্গামাটি সরকারী বিশ^-বিদ্যালয়ে ডিগ্রীতে লেখাপড়ার পাশাপাশি তার পিতা হেমরঞ্জন চাকমাকে মিশ্র বাগানে সহায়তা তার মেয়ে সুজলা চাকমা।
সুজলা চাকমা জানান, ভান্তের বাগান দেখে এখানে আমরাসহ আরো অনেকে মিশ্র ফলের বাগান করতে এগিয়ে এসেছেন। তার পিতার মিশ্র ফলের বাগানে এবার ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুজলা চাকমা। তাদের গড়ে তোলা এ বাগানের ফল বিক্রি করে তাদের পরিবারের সকল খরচের পাশাপাশি লেখাপড়ার খরচ ও চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান।
বোধিপুর বনবিহারের অধ্যক্ষ এবং ত্রিশরণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জীনবোধি মহাথেরোর মিশ্র বাগানে সার্বিকভাবে সহায়তা করছেন রাঙ্গামাটি জেলা কৃষি বিভাগ। এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শান্তিময় চাকমা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা(বাসস)কে বলেন, বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু জীনবোধি মহথেরোর মিশ্র ফলজ বাগানে রাঙ্গামাটি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহায়তা করা হচ্ছে।ধর্মীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি এলাকায় মানুষের বেকারত্ব দূরীকরণসহ ফলের চাহিদা মিটাতে পরিত্যক্ত পাহাড়ে মিশ্র ফলজ বাগানের সফলতা পাহাড়ের কৃষিতে নতুন মাইলফলক বলে জানিয়েছেন এ কৃষি কর্মকর্তা।
তিনি জানান, জীনবোধি মহাথেরোর মিশ্র ফলজ বাগানের সফলতা দেখে এলাকায় আরো অনেক কৃষক মিশ্র ফলের বাগান করতে এগিয়ে এসেছেন এবং এদের মধ্যে অনেকে সফলতা ও পাচ্ছেন। বৌদ্ধধর্মীয় গুরু জীনবোধি মহাথেরোর মতো পরিত্যক্ত পাহাড়ে মিশ্র ফলজ বাগানসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের আওতায় আনতে পারলে দেশের খাদ্য চাহিদা মিটাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে থেকে কৃষি ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।
বোধিপুর বনবিহারের অধ্যক্ষ এবং ত্রিশরণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জীনবোধি মহাথেরো বাংলাদেশ সংবাদ (বাসস) সংস্থাকে জানান, তিনি আগে ৫ একর এবং বর্তমানে নতুনভাবে আরো প্রায় ৫ একরসহ মোট ১০ একর পরিত্যক্ত পাহাড়ে মিশ্র ফলজ বাগান করছেন। তার এ বাগানগুলো সফলভাবে গড়ে তুলতে তিনি সরকারী সহায়তা কামনা করেছেন এবং পাশাপাশি সরকারী বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে তার মিশ্র ফলজ বাগানের প্রসরতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং সফল হবে বলে জানান এ ধর্মীয় গুরু।
বছরের প্রায় প্রতিটি সময়েই জীনবোধি মহাথেরোর গড়ে তোলা বাগানে শোভা পাচ্ছে কোন না কোন ফল। পাহাড়ে ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি জীনবোধি মহাথেরোর মিশ্র ফলজ বাগানের সফলতার গল্প এখন সকলের মুখে মুখে।
অনাবাদি পাহাড়ী পরিত্যক্ত জমিতে মিশ্র ফলজ বাগানের সফলতা দেখে রাঙ্গামাটির অন্যান্য উপজেলাগুলোতে ও মিশ্র ফলজ বাগানে এগিয়ে আসছে কৃষক। এতে একদিকে যেমন অনাবাদি জমির ব্যবহার বেড়েছে তেমনি এলাকার অস্বচ্ছল পরিবারগুলো ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
সরকারী সহায়তার মাধ্যমে অনাবাদি পরিত্যক্ত পাহাড়গুলোকে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারলে এসব পরিত্যক্ত পাহাড়গুলো ফলের পাহাড়ে পরিনত হবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু জীনবোধি মহথেরোর এ উদ্যোগকে আরো এগিয়ে নিতে সরকারের সহায়তা চান এলাকাবাসী।

সূত্র – বাসস