পরিবহন ধর্মঘট চলছে, ভোগান্তিতে মানুষ

সংসদে সদ্য পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবি আদায়ে সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে রোববার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে লাগাতার ধর্মঘটের ঘোষণাও দিয়েছে সংগঠনটির নের্তৃবৃন্দ।

এদিকে আজ সকাল থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলা লোকাল বাসের দেখা মিলছে না। হঠাৎ এক-দুইটা দেখা মিলেলেও সেগুলোতে উঠার কোনও উপায় নেই। আর সেই কারণে দেখা দিয়েছে চরম ভোগান্তি।

শ্রমিকরা নিজেরা গণপরিবহন চালানো বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি পয়েন্টে পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে তারা থামিয়ে দিচ্ছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ যাত্রীদের। এজন্য দিনের শুরুতেই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মস্থলগামী মানুষ ও স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীরা।

সকালে অফিসগামীসহ যারাই বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টায় ছিলেন তারা অনেক সময় অপেক্ষা করেও কোন বাস পাননি। দুই একটি বিআরটিসির বাস চলাচল করলেও তা অত্যন্ত কম।

অনেকে বাস পাচ্ছেন না। সিএনজি চালিত অটোরিকশারও দেখা পাওয়া যায়নি সকালে। উপায় না পেয়ে অনেকে মানুষকে বাসের জন্য অপেক্ষা না করে হেঁটেই রওনা দিতে দেখা গেছে।

রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, সাতরাস্তা, মহাখালী, মিরপুর, ধানমন্ডি, উত্তরা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া রাস্তায় কোনো গণপরিবহনেরই দেখা মিলছে না। মাঝেমধ্যে কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশার দেখা মিললেও তারা দাবি করছে ‘গলাকাটা’ ভাড়া। আবার এই ভাড়ায় গাড়িতে চেপে বসলেও পরিবহন শ্রমিকরা তাদের নামিয়ে দিচ্ছেন।

পরিবহন না পেয়ে মানুষকে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। বিশেষ করে নারী ও বয়স্কদের পড়তে হয়েছে বেশি ভোগান্তিতে।

শনিবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েক হাজার পরিবহন শ্রমিক সমাবেশে অংশ নেন। সেখানে সংসদে পাশ হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর কয়েকটি ধারা সংশোধন এবং ৮ দফা দাবি পূরণের আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণা করা হয় ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট কর্মসূচি।

এ ব্যাপারে রোববার সকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জানান, আমরা ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। সরকারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের দাবি মানা হয়নি। যে কারণে আমরা পাশ হওয়া আইনের কিছু ধারার সংশোধন ও উত্থাপন করা ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছি। এই কর্মসূচি সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই কর্মসূচিতে বিক্ষোভ মিছিল হবে, তবে পিকেটিং করা হচ্ছে না। আমাদের কর্মবিরতির সুযোগ নিয়ে থার্ডপার্টি, পুলিশ কিংবা অন্য কোনো পক্ষ যদি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে তবে তা রুখে দেয়া হবে। সেজন্য আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিবহন শ্রমিকরা সড়কে রয়েছি।

এ সময় সংগঠনটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াজিউদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর পক্ষে ৮ দফা দাবি এবং কর্মসূচি সংবলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়।

লিফলেটে বলা হয়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়। ফেডারেশন দীর্ঘদিন ধরে যুগোপযোগী আধুনিক ও উন্নত সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের দাবি করে আসছে। সেই দাবি গুরুত্বসহ বিবেচনায় নিয়ে সরকার আইন পাস করলেও বেশকিছু ধারা শ্রমিক স্বার্থের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। যে কারণে পরিবহন শ্রমিকদের চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইনে সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। আমরা জানি, দুর্ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটে না কিন্তু অপরাধ পরিকল্পিতভাবেই ঘটে।

পরিবহন শ্রমিকদের আট দফা দাবি হলো :

১. সড়ক দুর্ঘটনায় মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে;

২. শ্রমিকদের অর্থদণ্ড ৫ লাখ টাকা করা যাবে না;

৩. সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে;

৪. ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে;

৫. ওয়েটস্কেলে (ট্রাক ওজন স্কেল) জরিমানা কমানোসহ শাস্তি বাতিল করতে হবে;

৬. সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে;

৭. গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে;

৮. সব জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে এবং লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।