‘বান্ধবী’ অর্চনা রাণীকে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্যই গত ৩ জুলাই বাসা থেকে বের হয়েছিলেন কবি-প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার। ওই দিন সন্ধ্যায় খুলনা নিউ মার্কেটের একটি দোকান থেকে দুই দফায় ওই নারীর কাছে ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন তিনি। অর্চনার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নিজের কাছে না থাকায় পরিবার থেকে নেওয়ার জন্য ‘অপহরণের’ কথা বলেছিলেন ফরহাদ মজহার।
১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক।
এখন পর্যন্ত পাওয়া সব তথ্য-প্রমাণের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, নিজের ইচ্ছেতেই ঘর থেকে বের হয়েছিলেন ফরহাদ মজহার। বাসে চড়েই ঢাকা ছেড়েছিলেন তিনি; আবার বাসে চড়ে ঢাকা ফিরতে চেয়েছিলেন। তবে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করতেই অপহরণ এবং মাইক্রোবাস করে নেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।
আইজিপি জানান, মাইক্রোবাসে করে নেওয়া হচ্ছে- এমন তথ্য পাওয়ার পর প্রতিটি জেলায় চেকপোস্ট বসিয়ে সব মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, ফহদার মজহারের কাছে যে ব্যাগ পাওয়া গেছে- তা তার কাছেই ছিল। আর তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটে ২টি সিম কার্যকর ছিল। এর একটি দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে এবং অন্যটি দিয়ে অর্চনা রাণীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন তিনি।
শহীদুল হক বলেন, ২০০৫ সালে ফরহাদ মহজারের পরিচালিত উবিনীগ নামক এনজিওতে চাকরি নেন অর্চনা রানী। সেই সুবাদে তাদের পরিচয় হয়; দুই জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর এক পর্যায়ে রোগাক্রান্ত হন অর্চনা। তখন চিকিৎসকের পরামর্শে তার চিকিৎসা হয়েছিল। গত জুন মাসে আবারও একই রোগে আক্রান্ত হন অর্চনা। সেই রোগের চিকিৎসা করতে বেশি পরিমাণ টাকার দরকার ছিল। আর সেটা দিতে চেয়েছিলেন ফরহাদ মজহার।
তিনি আরও জানান, ঢাকা থেকে খুলনা যাওয়ার পর খুলনা নিউ মার্কেটের একটি দোকান থেকে দুই দফায় অর্চনার কাছে ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন ফরহাদ মজহার। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা ৪ মিনিটে প্রথম দফায় ১৩ হাজার টাকা এবং সন্ধ্যা ৭টা ২৮ মিনিটে দ্বিতীয় দফায় আরও ২ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে গত ৩ জুলাই ভোরে বের হন ফরহাদ মজহার। এরপর ওইদিন সকাল ১১টার দিকে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তার স্বজনেরা। তারা বলেন, বাসার মোবাইলে ফোন করে অপহরণ এবং মুক্তিপণের কথা জানিয়েছেন ফরহাদ মজহার।
এরপর মোবাইল ফোন নাম্বার ট্র্যাকের মাধ্যমে ফরহাদ মজহারের সন্ধানে অভিযান অভিযান শুরু করে র্যাব ও পুলিশ।
ওইদিনই সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফরহাদ মজহারের খোঁজে খুলনায় অভিযান শুরু করে র্যাব-৬। র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ফোন নাম্বার ট্র্যাক করে জেনেছেন, ফরহাদ মজহার খুলনায় অবস্থান করছেন। রাত ১১টার দিকে উদ্ধার অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেছিল র্যাব। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে নওয়াপাড়া থেকে ফরহাদ মজহারকে ‘উদ্ধার’ করা হয়।
আজকের বাজার:এলকে/ এলকে/ ১৩ জুলাই ২০১৭