পাকিস্তানের কাছে হেরে সেমিফাইনালের স্বপ্ন ভঙ্গ বাংলাদেশের

পাকিস্তানের কাছে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেলো বাংলাদেশের।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে আজ পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ।
এই হারে ৫ খেলায় ২ জয় ও ৩ হারে ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে থেকেই  বিদায় নিতে হলো  টাইগারদের। সমানসংখ্যক ম্যাচে ৩ জয় ও ২ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সেমির টিকিট পেল পাকিস্তান। এই গ্রুপ থেকে সেমির টিকিট পাওয়া অপর দল ভারত।   দিনের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে সেমিতে খেলার সুযোগ হেলায় হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট প্রোটিয়াদের।
জিতলেই সেমিফাইনাল-এই সমীকরণকে মাথায় নিয়ে তিনটি পরিবর্তন এনে পাকিস্তানের বিপক্ষে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। ইয়াসির আলি, হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান সৌম্য সরকার, নাসুম আহমেদ ও এবাদত হোসেন।
অ্যাডিলেড ওভালে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
প্রথম দুই ওভারে ১টি করে চার মারেন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদিও করা তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে পুল করে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। ঐ ওভারের পঞ্চম বলে কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে শান মাসুদকে ক্যাচ দেন ৮ বলে ১০ রান করা লিটন।
পরের ওভারের প্রথম বলে কভারে শাদাবকে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান শান্ত। তবে  ওভারে শান্তর চার ও তিন নম্বরে নামা সৌম্যর ছক্কায় ১৩ রান পায় বাংলাদেশ।
পাওয়ার-প্লেতে বাংলাদেশ পায় ১ উইকেটে ৪০ রান। অষ্টম ওভারে ৫০ ও ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭০ রান।
১১তম ওভারে নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে বাংলাদেশকে জোড়া ধাক্কা দেন স্পিনার শাদাব খান। পরপর দুই বলে সৌম্য ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে শিকার করেন তিনি।
ওভারের চতুর্থ বলে রিভার্স সুইপ করে পয়েন্টে মাসুদকে ক্যাচ দেন সৌম্য। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৭ বলে ২০ রান করেন সৌম্য। দ্বিতীয় উইকেটে শান্তর সাথে ৪৭ বলে ৫২ রান যোগ করেন সৌম্য।
পঞ্চম বলে উইকেট ছেড়ে সামনে এসে খেলতে গিয়ে লেগ বিফোর আউট হন সাকিব। পাকিস্তানীদের আউটের আবেদনে বেশ দেরিতে আঙ্গুল তুলেন নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। উইকেট বাঁচাতে রিভিউ নেন সাকিব। থার্ড-আম্পায়ারে বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বিদায় নিতে হয় সাকিবকে। কারন রিপ্লেতে ব্যাটে-বলের হালকা স্পর্শ দেখা যায়। টিভি আম্পায়ার জানান, ব্যাট মাটিতে লাগায় শব্দ পাওয়া গেছে। এতে অন-ফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্বান্ত বহাল থাকে। আউটের সিদ্বান্ত স্কিনে দেখার পরও অন-ফিন্ড আম্পায়ারের সাথে কথা বলেন সাকিব। শেষ ডর্যন্ত  একরাশ হতাশা নিয়ে ১ বল খেলে শূণ্যতে বিদায় নেন সাকিব।
পরপর দুই বলে ২ উইকেট হারানোয় ১১ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৭৪।
১৩তম ওভারে ৪৬ বল খেলে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করেন শান্ত। বাউন্ডারি দিয়ে ১৪তম ওভার শুরু করলেও, দ্বিতীয় বলে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে ইফতেখারের বলে বোল্ড হস শান্ত। মৃত্যু ঘটে তারর ৭টি চারে ৪৮ বলে ৫৪ রানের ইনিংসের।
১৭তম ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনকে ৫ ও নুরুল হাসানকে শূন্যতে সাজঘরে বিদায় দেন আফ্রিদি। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ১ রান তাসকিন আহমেদকেও শিকার করেন আফ্রিদি।
শেষ দিকে আফিফের দু’টি ও নাসুমের ১টি চারে ২০ ওভারে ১২৭ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ৩টি চারে ২০ বলে অপরাজিত ২৪ রান করেন আফিফ। ৬ বলে ৭ রান করেন নাসুম।
৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন আফ্রিদি। ৪ ওভারে ৩০ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন শাদাব।
১২৭ রানের পুঁিজ নিয়ে বাংলাদেশকে দারুন শুরুর উপলক্ষ্য তৈরি করেছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের তৃতীয় বলে তাসকিনের অফ-স্টাম্পের বাইরের বলে  রিজওয়ানের সহজ ক্যাচ মিস করেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান।
শুরুতেই জীবন পেয়ে অধিনায়ক বাবর আজমের সাথে ১০ ওভার পর্যন্ত কাটিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৫৬ রান তুলে নেন রিজওয়ান।  এসময় বাংলাদেশ ফিল্ডারদের মিস ফিল্ড চোখে পড়ার মত ছিলো।
১১তম ওভারে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার নাসুম। শর্ট থার্ডম্যানে মুস্তাফিজকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন  ৩৩ বলে ২৫ রান করা বাবর।
পরের ওভারে রিজওয়ানকে বিদায় দেন এবাদত। পয়েন্টে রিজওয়ানের ক্যাচ দেন শান্ত। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩২ বলে ৩২ রান করেন রিজওয়ান।
১২তম ওভারে নাওয়াজকে রান আউটের সহজ সুযোগ মিস করেন শান্ত। ১৫তম ওভারে পাকিস্তানের তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটে। শর্ট কাভারে বল ঠেলে ১ রান নিতে গিয়ে রান আউট হন নাওয়াজ। সরাসরি থ্রোতে নন-স্ট্রাইকের স্টাম্প ভাঙ্গেন লিটন। ১১ বলে ৪ রান করেন নাওয়াজ।
১৫ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ৩ উইকেটে ৯৪। শেষ ৩০ বলে ৩৪ রান দরকার পড়ে পাকদের। কিন্তু  চতুর্থ উইকেটে ১৪ বলে ২৯ রান তুলে পাকিস্তানের জয় সহজ করে ফেলেন মাসুদ ও হারিস।
১৮তম ওভারে উল্কা গতিতে থাকা  হারিসকে থামান সাকিব। ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৮ বলে ৩১ রান করেন হারিস। ১৮তম ওভারে ইফতেখারকে(১) শিকার করেন মুস্তাফিজ। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ২ রান নিয়ে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন মাসুদ। ১৪ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। বাংলাদেশের নাসুম-সাকিব-মুস্তাফিজ-এবাদত ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন পাকিস্তানের আফ্রিদি।
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ ইনিংস :
শান্ত বোল্ড ব ইফতেখার ৫৪
লিটন ক মাসুদ ব আফ্রিদি ১০
সৌম্য ক মাসুদ ব শাদাব ২০
সাকিব এলবিডব্লু ব শাদাব ০
আফিফ অপরাজিত ২৪
মোসাদ্দেক বোল্ড ব আফ্রিদি ৫
নুরুল ক হারিস ব আফ্রিদি ০
তাসকিন ক বাবর ব আফ্রিদি ১
নাসুম ক ওয়াসিম ব রউফ ৭
মুস্তাফিজুর অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-২, লে বা-৩, ও-১) ৬
মোট (৮ উইকেট, ২০ ওভার) ১২৭
উইকেট পতন : ১/২১ (লিটন), ২/৭৩ (সৌম্য), ৩/৭৩ (সাকিব), ৪/৯১ (শান্ত), ৫/১০৭ (মোসাদ্দেক), ৬/১০৭ (নুরুল), ৭/১০৯ (তাসকিন), ৮/১২৬ (নাসুম)।
পাকিস্তান বোলিং :
আফ্রিদি : ৪-০-২২-৪,
নাসিম : ৩-০-১৫-০,
ওয়াসিম : ২-০-১৯-০ (ও-১),
রউফ : ৪-০-২১-১,
শাদাব : ৪-০-৩০-২,
ইফতেখার : ৩-০-১৫-১।
পাকিস্তান ইনিংস :
রিজওয়ান ক শান্ত ব এবাদত ৩২
বাবর ক মুস্তাফিজ ব নাসুম ২৫
নাওয়াজ রান আউট (লিটন) ৪
হারিস ক নাসুম ব সাকিব ৩১
মাসুদ অপরাজিত ২৪
ইফতেখার ক শান্ত ব মুস্তাফিজ ১
শাদাব অপরাজিত ০
অতি (লে বা-৭, নো-২, ও-২) ৯
মোট (৫ উইকেট, ১৮.১ ওভার) ১২৮
উইকেট পতন : ১/৫৭ (বাবর), ২/৬১ (রিজওয়ান), ৩/৯২ (নাওয়াজ), ৪/১২১ (হারিস), ৫/১২৬ (হারিস)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ৩-১-২৬-০ (নো-১),
নাসুম : ৪-০-১৪-১ (ও-২),
সাকিব : ৪-০-৩৫-১,
মুস্তাফিজুর : ৪-০-২১-১,
এবাদত : ৩.১-০-২৫-১ (নো-১)।
ফল : পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : শাহিন শাহ আফ্রিদি (পাকিস্তান)।