পাল্টাচ্ছে ইলিশের প্রজনন মৌসুম

আজকের বাজার প্রতিবেদন
ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে আগামী ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। মূলত এ নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে যাতে জেলেরা মা ইলিশ শিকার না করেন। অথচ গত মাস থেকে সাগরে যে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে তাতে অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম ছিল। আর বর্তমানে যে ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে তা ছোট ছোট জাটকা ইলিশ। এ কারণে প্রজনন বিশেষজ্ঞরা বলছেন ইলিশের প্রজনন মৌসুম পাল্টে যাচ্ছে, কিন্তু সরকারের নিষেধাজ্ঞার সময় পাল্টায়নি।
ইলিশ প্রজননের উদ্দেশ্যে স্বাদু পানির ¯্রােতের উজানে অগভীর পানিতে উঠে আসে এবং ডিম ছাড়ে। মুক্ত ভাসমান ডিম থেকে পোনা বেরোয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক মাছ (জাটকা) নদীর ভাটিতে নেমে সমুদ্রে পৌঁছে বড় হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রজননক্ষম হয়ে জীবনচক্র পূর্ণ করার জন্য আবার নদীতে ফিরে আসে।

ইলিশ উচ্চ উৎপাদনশীল। বড় আকারের একটি ইলিশ ২০ লক্ষ পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে। ইলিশ সারা বছর ডিম পাড়লেও সবচেয়ে কম পাড়ে ফেব্রুয়ারি-মার্চে ও সবচেয়ে বেশি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। দেশের বড় বড় নদীতে জাটকা নামে পরিচিত সমুদ্রগামী অপ্রাপ্তবয়স্ক (৬-১০ সেমি) মাছ প্রচুর ধরা পড়ছে।
সমুদ্র তীরবর্তী বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ মানুষ গভীর সমুদ্রে গিয়ে ইলিশসহ সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছ শিকার করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। পাশাপাশি এ থেকে আসছে বৈদেশিক মুদ্রাও।
সরকারিভাবে জাতীয় মাছ রূপালী ইলিশের প্রজনন মৌসুম ১ অক্টোবর থেকে শুরু। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর প্রজনন মৌসুম শুরু হবে অক্টোবরের প্রথম দিকে। এজন্য শিকারে নিষেধাজ্ঞা হওয়া উচিত ছিলো পুরো সেপ্টেম্বর জুড়ে।
বিগত দিনের কর্মপরিকল্পনা ও অনেক জেলের অভিজ্ঞতার কথার আলোকে জানা যায়, ইলিশ প্রজনন মৌসুম শুরুর ৪/৫ দিন আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়। পরে ওই তারিখ জেলেদের জানিয়ে দেয়া হয় যে, এই সময়সীমার মধ্যে গভীর সমুদ্রে সকল প্রকার মাছ শিকার করা বন্ধ রাখতে হবে। যেদিন এই বার্তা জেলেদের অবগত করা হয় সেদিন অথবা তার দু’এক দিন আগে অনেকে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যায়। ওইসব জেলের মধ্যে অনেকে ৫ দিন, ৭ দিন এমনকি অনেকে ১০ দিন পর তীরে এসে পড়ে বিপাকে। সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার অন্তত ১৫/২০ দিন আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বার্তাটি জেলেদের মাঝে দিলে তারা সঠিভাবে তা পালন করতে পারতেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন জানান, জেলেদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। জেলেদের নিয়েই বিভিন্ন সময় সভা সমাবেশ করে অনেক আগেই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তাদের জানানো হয়।
জেলেদের অভিযোগের ব্যাপারে আমতলীর সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, মৎস্য মন্ত্রণালয় যে সিন্ধান্ত নেয় তা শুধু আমরা পালন করে থাকি। এখানে আসলে আমাদের করার কিছুই থাকে না। এ উপজেলার সকল জেলেই আগ থেকে এ নিষেধাজ্ঞার কথা জানেন।
পায়রা নদীতে মাছ শিকারী জেলে রহমান গাজী, আলম তালুকদার, মনির হাওলাদার ও জব্বার গাজী বলেন গত ১৫ দিন পূর্বে নদীতে প্রচুর মা ইলিশ ধরা পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে নদীতে শুধু জাটকা ইলিশ ধরা পড়ছে। বর্তমানে প্রজনন মৌসুম হলেও প্রজননক্ষম তেমন মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না। তারা আরো বলেন, ধারণা করা হচ্ছে সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রজননের উপযুক্ত সময় ছিল।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী ও প্রজনন বিভাগের বিষেশজ্ঞ ড. আবুল কাসেম চৌধুরী বলেন, ইলিশ প্রজনন মৌসুম পাল্টে গেছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞার সময়টি আরো ১০/১৫ দিন আগে দিলে ভালো হতো। এখন মা ইলিশ জেলেদের জালে খুবই কম ধরা পড়ছে। যা পড়ছে তার অধিকাংশই জাটকা ইলিশ।