পায়রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা

নাজমুল লিখন: দেশে যতগুলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের কথা বলা হচ্ছে তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ইতিমধ্যে কেন্দ্রটির ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৯ সাল নাগাদ এখান থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে আশা করছে সরকার। এটি হবে দেশের প্রথম সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
শুক্রবার ২২ ডিসেম্বর পটুয়াখালির পায়রায় নির্মাণাধীন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
এসময় সেখানে উপস্থিত বিদ্যুৎ, জালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন শুরু হবে। ওই এলাকায় অন্তত ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎতের চাহিদা তৈরি হবে। যার মধ্যে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে পায়রার বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।
‘আমরা আশা করছি ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট (৬৬০ মেগাওয়াট) ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে এবং দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে একই বছরের অক্টোবরে। পাঁচ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসবে।’ যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী। সরকার দেশে বড় তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাব নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে মহেশখালি, মাতারবাড়ি ও পায়রা। পটুয়াখালির কলাপাড়া উপজেলার পায়রায় প্রায় ১ হাজার একর জায়গাজুড়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাব নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুরো এলাকা সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়েছে। চলছে ভুমি ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। বাংলাদেশ চীনসহ কয়েক দেশের প্রায় তিন হাজার শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন এখানে। এরমধ্যে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি, ৬০০ চীনা ও কয়েকশ ভারতীয় ও মালয়েশিয়ান শ্রমিক আছেন।

বিভিন্ন দেশ থেকে নৌ-পথে নির্মাণ সামগ্রী আসছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অস্থায়ী জেটিতে। অত্যাধুনিক ক্রেনের মাধ্যমে জাহাজ থেকে তুলে ট্রাকযোগে তা পাঠানো হচ্ছে প্রকল্প এলকায়। স্থায়ী জেটি নির্মাণের লক্ষ্যে রামনাবাদ চ্যানেলে শুরু হয়েছে কাজ। এই জেটি থেকে কয়লা খালাস হয়ে চলে যাবে বয়লারগুলোতে। তবে পায়রা বন্দর চালু হলে আরও বড় সুবিধা মিলবে বলে মনে করেন বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ করছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি করতে লাগবে ১.৬ বিলিয়ন ডলার। আর ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে দরকার ১২ বিলিয়ন ডলার বা ৯৬ হাজার কোটি টাকা।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পায়রা বিদ্যুৎ হাবে চারটি পদ্মা সেতুর পরিমাণ বিনিয়োগ হবে। চীন ও বাংলাদেশ যৌথভাবে এই কেন্দ্রের কাজ করছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে চীনের এক্সিম ব্যাংক বিনিয়োগ করছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকেও বিনিয়োগ করা হবে।
কয়লার উৎস সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী জানালেন, ‘আপাতত ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে এখানে উন্নতমানের কয়লা ব্যবহার করা হবে। কয়লাগুলো উন্মুক্ত অবস্থায় থাকবে না। এজন্য বাড়তি টাকাও ব্যয় করা হচ্ছে। উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম কত হবে? জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, সবচেয়ে সাশ্রয়ীমূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এখানে। এখন পর্যন্ত আমাদের যে হিসেব তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৮ সেন্ট বা ৬ টাকা ৪০পয়সার মত।’
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, স্থানীয় বাসিন্দাদের পূনর্বাসন এবং কত কম সময়ে জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা যায় সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সময়ের ব্যাপারে আমরা তুলনামূলক এগিয়ে। অন্যান্য বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানালেন, প্রকল্প এলাকার বাইরে ক্ষতিগ্রস্থ ১৩৫ পরিবার পুনর্বাসনে আবাসনের কাজ চলছে। এছাড়া স্কুল, বাজার, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘিরে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও এখানে আরও ১০০ মেগাওয়াট সৌর এবং ৫০ মেগাওয়াট বায়ুচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্টান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড ও চীনের চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসিএল) বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মালিক।

নির্মানাধীন কেন্দ্রটি ছাড়াও পায়রায় পর্যায়ক্রমে ছয় হাজার ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড। এরমধ্যে সিএমসির সঙ্গে অংশিদারিত্বে একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, জার্মানির সিমেন্স এজির সঙ্গে তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার কথা রয়েছে। এছাড়া রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) ও আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন লিমিটেড একটি করে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার কথা ভাবছে পায়রায়।
আজকের বাজার: এনএল/ ওএফ/ সালি, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭