চীনা কনসোর্টিয়ামের ৯৪৭ কোটি টাকার মধ্যে ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে দেশের পুঁজিবাজারে। আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই এই অর্থ বিনিয়োগ হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তবে এই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য শর্ত জুড়ে দেওয়া হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন এ প্রসঙ্গে আজকের বাজারকে বলেন, ‘চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করারা সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই ডিএসই’র সব সদস্য ব্রোকারেজ হাউজের হিসাবে জমা হবে।তার জন্য নতুন ব্যাংক হিসাব খোলা হবে যার মাধ্যমে সকল সদস্য এই টাকা পাবে। তবে শর্ত থাকবে এই টাকা আগামী তিন বছর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে এবং ডিএসই তার তদারকি করবে।
তিনি আরও বলেন, ডিএসই’র শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে যারা চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ তিন বছরের জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন, তাদের উৎসে কর দিতে হবে ১৫ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশ হারে। এ কারণে ডিএসই’র সব সদস্যই চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চান।
এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকার চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা শেয়ারবাজারে আনতে উৎসে কর ১০ শতাংশ কমিয়েছে। এর ফলে চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে উৎসে কর দিতে হবে ১৫ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশ হারে।
এদিকে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররাও এনবিআর থেকে এ সংক্রান্ত একটি এসআরও জারির অপেক্ষায় রয়েছেন। যদিও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র বলছে, চীনের দুই প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিনিয়োগের শর্তেই উৎসে কর ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার বিষয়ে গত সপ্তাহে সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তবে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা, চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হলে বাজারে তেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়ার কিছু দেখছেন না।পুঁজিবাজারের তুলনায় এই অর্থ খুবই সামান্য। তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের লাভবান করতে পারলেই বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকদের ধারনা।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক প্রফেসর আবু আহমেদ আজকের বাজারকে বলেন, ৯০০ কোটি টাকা বাজারের জন্য তেমন বড় কোন টাকা না।ডিএসইর একদিনের লেনদেনের পরিমানের সমান এই টাকার পরিমান । এই টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হলে বাজারে তেমন প্রভাব পড়বেনা বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে পাড়লেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই বিনিয়োগকারীদের লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে আর বাজারে দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, বিএসইসি যে হারে দুর্বল কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য অনুমোদন দিচ্ছে তাতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছেনা।আইপিওর নামে যেসব জাং শেয়ারের অনুমোদন দিচ্ছে তাতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছেনা। বাজার ভালো হলে তারল্য প্রবাহ স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। বিনিয়োগকারিরা লাভ দেখলে এমনিতেই তারল্যের যোগান দিবে।
এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া প্রায় ৯৪৭ কোটি টাকার ওপর কর সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে এই সুবিধা নেওয়ার জন্য ওই অর্থ তিন বছরের জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শর্ত দেন তিনি। ওই অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স চার্জ করা হবে বলেও জানান তিনি। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, চীনা কনসোর্টিয়াম থেকে প্রাপ্ত ৯৪৭ কোটি টাকার ওপর ৫ শতাংশ হারে ৪৭ কোটি টাকার ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। বাকি ৯০০ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক আজকের বাজারকে বলেন, যেহেতু আমরা সরকারকে উৎসে কর ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ দিতে চাই,সেখানে আমাদের ১০ শতাংশ লাভবান হচ্ছি সেহেতু তিন বছরের জন্য চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা দেশের পুজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চাই।এবিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন ২৩৭ ব্রোকার হাউস। এই হিসাবে প্রত্যেক ব্রোকারের নামে জমা হয়েছে ৩কোটি ৬৬লাখ বা ৩কোটি ৭৬লাখ টাকা করে।শুধু এসআরও জারি না হওয়ার কারনেই টাকা ডিএসই’র সদস্যদের হিসাবে জমা হচ্ছেনা।
এদিকে, গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রায় ৯৬২ কোটি টাকা ডিএসইর ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়েছে চীনা কনসোর্টিয়াম। এরমধ্যে স্ট্যাম্প খরচ বাবদ ১৫ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯৪৭ কোটি টাকা পাচ্ছেন ডিএসইর সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের শর্ত বাস্তবায়নে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রি করা হয়। ইতোমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার হস্তান্তর করেছে ডিএসই। শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জি ওয়েনহাইকে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও করা হয়েছে।
জাকির/আজকের বাজার