পুঁজিবাজারে পজিটিভ বার্তা দিবে-মোহাম্মদ আলী

‘আইএক্সপোর ইনভেস্টম্যান উইক’ এটা ব্যাসিক্যালি একটা অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম ফর দ্যা ইনভেস্টরস। এ আয়োজনে বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বাড়বে এবং বিনিয়োগে তাদের শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পাবে। যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটা পালিত হচ্ছে সেহেতু বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে একাত্ম হচ্ছে।  পুরো পুঁজিবাজরের জন্য তা একটা পজিটিভ সিগন্যাল বয়ে আনবে। আমি মনে করি, বিনিয়োগ শিক্ষা, বিনিয়োগ সচেতনতা ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সপ্তাহ সবই হলো পুঁজিবাজারের জন্য একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য এটা একটা বিশেষ সুযোগ। বিনিয়োগ করার জন্য তাদের শিক্ষা নিতে হবে। বুঝে শুনে বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা সর্বোচ্চ রিটার্ন নিতে পারবে।

এটা যে কেবল বাংলাদেশে হচ্ছে তা কিন্ত না । বিশে^র অন্যান্য দেশেও এই সপ্তাহ একই সময়ে পালিত হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা। বিনিয়োগের যথাযথ শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা। এ জন্য সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তা হলো রোড শো, সেমিনার, এবং বিনিয়োগ শিক্ষার নানা বিষয়ের উপর আলোাচনা। এগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন বিষয় জানতে পারবে। জেনে-শুনে তারা বিনিয়োগ করতে পারবেন।

ব্যাংকের শেয়ার মূল্য বাড়ার কারণ:

আসলে বিশ্ব পুঁজিবাজার কখনও স্থিতিশীল থাকে না, যদি থাকে তাহলে একে পুঁজিবাজার বলা যাবে না। এখানে আপস এন্ড ডাউন থাকবেই। স্থিতিশীলতা মানে হলো, অধিক পরিমাণে উত্থান বা বেশি পরিমাণে পতন না হওয়া। সেক্টর টু সেক্টরের ভারসাম্য নিয়ে আসার একটা প্রক্রিয়া। এখানে পুরো ব্যাপারটাই আসলে নির্ভর করে বিনিয়োগকারীদের উপর। এখন দেখা গেল যে গত দুসপ্তাহ ব্যাংকের শেয়ার বেড়ে গেছে। এই বাড়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ কাজ করেছে। এক নম্বর হলো ব্যাংকগুলো ভালো লভ্যাংশ দেয়। তাদের যে ডিভিডেন্ড ইল্ড, তা অন্যান্য, কোম্পানিগুলোর চাইতে বেশি। একজন বিনিয়োগকারী চিন্তা করে যদি একটা ব্যাংকে ২০ টাকা রাখে তাহলে সে পাচ্ছে ৮০ পয়সা। সেখানে যদি সে ২০ টাকার শেয়ার কেনে তাহলে সে ডিভিডেন্ড পাচ্ছে দেড় টাকা। তাহলে আমি কেন ব্যাংকে টাকা রাখব? আমি তো ব্যাংকের শেয়ার কিনবো। কারণ সেখানে আমার লাভ বেশি। আর তাই এখন বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ারে বেশি আসছেন, ব্যাংকের শেয়ার কিনছেন।  ব্যাংকিং সেক্টরটা এখন হোল্ডিং পজিশনে আছে।

আসলে খেয়াল করলে দেখা যাবে, গত দুই তিন বছর আমাদের ব্যাংকগুলো বেশ ভালো পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়ে গেছে। যা ইতিপূর্বে দেয় নি। এর আগে ব্যাংকগুলো বোনাস, রাইট শেয়ার ইত্যাদি সুবিধা দিত, কিন্ত যখনই সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন একটা বাঁধ দিয়ে দিল যে, আপনাকে দুই পার্সেন্ট হোল্ড করতে হবে। এখন যদি সে বোনাস দেয় তাহলে দেখা যায় তার শেয়ারও বাড়ে টু-পার্সেন্ট। তো তাদের ডিরেক্টরদের সুবিধার জন্য ক্যাশ ফ্লো বেড়ে যায়। ফলে  ব্যাংকের ডিমান্ড বেড়েছে এবং বর্তমান বাজারে এর একটা আধিপত্য রয়েছে।

আমরা যারা অ্যানালিস্ট, তারা দেখি ব্যাংকিং সেক্টরের একটা শেয়ারে   ৮-৯ পর্যন্ত ডিভিডেন্ড থাকে, সে পর্যন্ত একটা শেয়ার নিরাপদ। অন্য সেক্টরে তো ডিভিডেন্ড ইল্ড ৪-৫ এর উপরে হয়ই না। আর তাই বিনিয়োগকাররীদের জন্য ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি এখন আলাদা আকর্ষণ দেখা যাচ্ছে। এখানে ল রিফর্ম হচ্ছে একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা সময়ের দাবির সঙ্গে পরিবর্তন-পরিমার্জন করতে হয়। বাজারে এর প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে গিয়ে এসব বাজারে প্রভাবিত হয়। কিন্ত এখন যে প্রভাব চলমান তা হচ্ছে, ইন্টারেস্ট রেট ডাউন এবং ব্যাংকগুলোর পেআউট প্রক্রিয়া। এ’দুটো হলো মূল বিষয়। অনেকে আবার ব্যাংকের ডিরেক্টরশিপ নেয়ার জন্য ব্যাংকের শেয়ার-পজিশন নিয়েছে। এতে করে তার শেয়ার হয়তো আপ রয়েছে, পরে সেক্টরওয়াইজ একটা মুভমেন্ট হয়েছে। আমি বলতে চাই,  যৌক্তিক কারণেই ব্যাংকের  শেয়ার মূল্য বেড়েছে।

মোহাম্মদ আলী

সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড