পুঁজিবাজারের জন্য সবচেয়ে বড় সুসংবাদ বছরে শেষে বেশিরভাগ ব্যাংক মুনাফার ধারায় ফিরেছে। ৩১ ডিসেম্বর সবগুলো ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাকের কাছে তাদের হিসাব জমা দিয়েছে। এতে দেখা যায় বেশিরভাগ ব্যাংক আগের বছরের চেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে।
জানা যায়, খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করার সুযোগ দিতে গত শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ খোলা ছিল। এ সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক প্রায় দেড় শ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করে নিয়মিত করেছে। ফলে তারা বাড়তি মুনাফা দেখাতে পেরেছে। কারণ পুনঃ তফসিল করায় খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন বা মুনাফা থেকে টাকা সঞ্চিতি রাখতে হয়নি।
এছাড়া বাড়তি মুনাফা এসেছে মূলত পণ্যবাণিজ্য থেকে। সদ্য বিদায় নেওয়া বছরে আমদানি বেশ বেড়েছে। এতে ব্যাংকগুলোও ভালো ব্যবসা করতে পেরেছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিচালন মুনাফার ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগের কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো। কারণ পরিচালন মুনাফা থেকে নিট মুনাফা বা প্রকৃত মুনাফার ধারণা পাওয়া কঠিন। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ও মন্দ ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখা এবং আয় কর পরিশোধের পর প্রকৃত মুনাফা বা নিট মুনাফার পরিমাণ জানা সম্ভব।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৭ সালে বরাবরের মতো ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে। এ বছর ব্যাংকটি ২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। গত বছর ছিল দুই হাজার কোটি টাকা।
ন্যাশনাল ব্যাংক ১ হাজার ২১৮ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০১৬ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা।
এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা হয়েছে ৭১১ কোটি টাকা, এর আগের বছর ছিল ৬৫০ কোটি টাকা।
সাইথইস্ট ব্যাংক ৯০১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০১৬ সালে ছিল ৮৫০ কোটি টাকা।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। গত বছর ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ৩২৬ কোটি টাকা।
ইস্টার্ন ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করে ৭৫০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ছিল ৬৪১ কোটি টাকা।
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা ৮০৯ কোটি টাকা, গত বছর ছিল ৭৫৪ কোটি টাকা।
দ্য সিটি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৬৯০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ছিল ৭৭৭ কোটি টাকা।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা হয়েছে ৬৬০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৬০১ কোটি টাকা।
ট্রাস্ট ব্যাংক ২০১৭ সালে ৬৩০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০১৬ সালে ছিল ৫০১ কোটি টাকা।
আইএফআইসি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৫০৪ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ৪৫০ কোটি টাকা।
ব্যাংক এশিয়ার মুনাফা হয়েছে ৬৯৫ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ৫৯০ কোটি টাকা।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭১১ কোটি টাকা, আগের বছর যা ছিল ৫০৮ কোটি টাকা।
পূবালী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৯১৫ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৬৭৩ কোটি টাকা।
এনসিসি ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৫৩৫ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ছিল ৪৭০ কোটি টাকা।
ডাচ বাংলা ২০১৭ সালে পরিচালন মুনাফা করেছে ৭৫০ কোটি টাকা, এর আগের বছর ছিল ৫৫২ কোটি টাকা।
যমুনা ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪৮৫ কোটি টাকা, আগের বছর ছিল ৪২২ কোটি টাকা।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক মুনাফা করেছে ৩৬০ কোটি টাকা। আগের বছর মুনাফা ছিল ২৯৭ কোটি টাকা।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪৭৫ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৩৭২ কোটি টাকা।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা করেছে ৩৬০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে মুনাফা করেছিল ২৯৭ কোটি টাকা।
রূপালী ব্যাংক ২০১৭ সালে ৫১১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। এর আগের বছর ১০০ কোটি টাকা লোকসান ছিল।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২০১৭ সালে ৪১৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০১৬ সালে ছিল ৩৪০ কোটি টাকা।
ওয়ান ব্যাংক ২০১৭ সালে ৫৫০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০১৬ সালে ছিল ৪৩৯ কোটি টাকা।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ২০১৭ সালে ৫৬০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০১৬ সালে ছিল ৭৬৫ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, পরিচালন মুনাফা থেকে ব্যাংকগুলোকে আগে নিয়মিত ঋণ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হবে। নিয়মিত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন ১ থেকে ২ শতাংশ, খেলাপির মধ্যে নিম্নমান ঋণে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। এর পরে মূলধন বাড়াতে তহবিলের একটি অংশ নিতে হবে রিজার্ভ তহবিলে। পরিশোধ করতে হবে আয়কর। এরপরে যা থাকবে তা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দেয়া যাবে।
আজকের বাজার: এলকে/ ১ জানুয়ারি ২০১৮