পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় ইনফরমেশন লিকেজ ঠেকাতে হবে

মঈন উদ্দিন। দেশের অন্যতম অভিজ্ঞ তরুণ স্টক ব্রোকার এবং সফল উদ্যোক্তা। অল্প সময়েই নিজেকে এবং প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে সফল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বর্তমানে শেল্টেক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। আইটি সেক্টর দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। দেশের অনলাইন ভিত্তিক পোর্টফলিও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রচলনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ক্যারিয়ার শুরু করেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দেশের একাধিক ব্রোকারেজ হাউজে দায়িত্ব পালন করেছেন। সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা এবং ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আজকের বাজারের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। আজকের বাজার প্রতিবেদক এস এম জাকির হোসাইনের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের চুম্বক অংশ তারই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা
২০১০ এর ধসের পর থেকে ওঠা-নামার মধ্যেই চলছে আমাদের পুঁজিবাজার। মার্কেটে যেমন ভালো সময় আছে তেমনি খারাপ সময়ও থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এখন মার্কেট উঠার সময় এসেছে। কারণ বিনিয়োগকারীরা এখন অনেক সচেতন হয়েছেন। পুঁজিবাজারে সবাই এখন  দেখে বুঝে বিনিয়োগ করা শিখেছেন।

বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার এখন অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ ইনফরমেশন লিকেজ অর্থাৎ কোম্পানি বা বিনিয়োগকারীর ট্রেডিং কিংবা ইনভেস্টমেন্ট ডিসিশনের ভেতরকার নানা রকমের তথ্য বাইরে বের হয়ে আসে। অনেক ইনসাইড ট্রেডিংও আছে। অনেকেই বলেন আপনার প্রতিষ্ঠানের ওই বিনিয়োগকারী এই শেয়ার কিনেছে, তখন জানতে চাইলে বলে সিডিবিএল থেকে জেনেছি, ডিএসই থেকে তথ্য পেয়েছি।  প্রাতিষ্ঠানিক এবং বড় বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে এটা অনেক বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।  আমি নিজেও অবাক হই যে, আমার কাছে প্রমাণ নেই কিন্তু তথ্য সঠিক । আর যখন তথ্য এভাবে ফাঁস হয়ে যায় বা বের হয়ে যায়; তখনই মার্কেটে গুজব সৃষ্টি হয়।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিনিয়োগকারী সৃষ্টি করা। আমরা অনেক ট্রেডার সৃষ্টি করতে পেরেছি কিন্তু বিনিয়োগকারী সৃষ্টি করতে পারিনি। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারী তৈরি করা একটা চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগকারী তৈরি করতে না পারলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে না। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে বেশি লাভবান হওয়া যায় এবং মার্কেটও স্থিতিশীল থাকবে ।

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা
এক হিসেবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তেমন বাধা নেই। কারণ রেগুলেটরিতে যারা আছেন তারা চাইলেই এই বাধাগুলো দূর করা সম্ভব। আগে খুঁজে বের করতে হবে এই সমস্যা কোথা থেকে হচ্ছে। তারপর সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নিলে সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যায়।  বিশেষ করে যারা এগুলোর সাথে সরাসরি জড়িত যেমন, ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক তাদের এই ভূমিকা নিতে হবে ।

 
সমস্যা সমাধানে করণীয়
সমস্যা সমাধানে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন প্রয়োগ করার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। যারা এই সমস্যাগুলো সৃষ্টি করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনলে হয়তো অন্যরা এই কাজে উৎসাহ পাবেনা। তখন স্বাভাবিকভাবেই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

মার্কেট স্থিতিশীল রাখতে পরামর্শ
মার্কেট স্বাভাবিক রাখতে সবার আগে তথ্য পাচার ও গুজব রোধে কাজ করতে হবে। যেমন- বিএসইসি, ডিএসসি, সিএসসি, ব্রোকারেজ এবং ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে । তা না হলে এই সমস্যা সমাধান করা কঠিন হবে । সেক্টর সম্প্রসারণ করতে হলে ভালো ইস্যু নিয়ে আসতে হবে। কর্পোরেট গভর্ননেন্স বাস্তবায়ন করতে হবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট গভর্নেন্স নিশ্চিত করতে পারে বিএসইসি,ডিএসই,সিএসই। অনেক কোম্পানি মার্কেটে আসার পর পাঁচ বছরে একবার ডিভিডেন্ট দিচ্ছে। কর্পোরেট গভর্নেন্স ইমপ্লিমেন্ট হলে এই সমস্যাগুলো থাকবে না। ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে। ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে হলে কর সুবিধাসহ প্রণোদনা দিতে হবে। কিছু জটিলতা থাকার কারণে ভালো কোম্পানি মার্কেটে আসতে চায় না। পুঁজিবাজারে আসলে জবাবদিহিতা বাড়ে। তার পরেও যদি কোম্পানিগুলো কিছু সুবিধা পায় তা হলে অবশ্যই আসবে। যেমন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে করের পরিমাণ কম হবে আর তালিকাভুক্ত না হলে কর বেশি দিতে হবে। আর এই ক্ষেত্রে এনবিআর,বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি ভালো ভুমিকা রাখতে পারে।

শেল্টেক ব্রোকারেজের বিশেষত্ব
শেল্টেক আজ ডিএসইর টপ টেন-এ আসতে পেরেছে শুধু কায়েন্টদের আস্থার কারণে। আস্থার কিছু কারণ রয়েছে, আমরা কায়েন্টকে অনেক সার্ভিস দিয়ে থাকি যাতে তারা  সন্তুষ্ট হন। আমাদের প্রতিষ্ঠানে কায়েন্টকে ওয়ান টু ওয়ান গাইডলাইন  দেওয়া হয়। আমরা রিসার্চ বেইজড বিনিয়োগ গাইডলাইন দিয়ে থাকি। তবে সিদ্ধান্ত কায়েন্টরা নিজেরাই নিয়ে থাকেন। আমরা রেগুলার বেসিসে মনিটর করি এবং কাস্টমারকে প্রতিনিয়ত আপডেট রাখি। প্রতিনিয়ত কায়েন্টদের সুবিধা ও স্বার্থ রক্ষা করার জন্য এক দল দক্ষ কর্মী নিয়োজিত রয়েছে। আমরা কায়েন্টের পোর্টফোলিও আপডেট তিনভাবে দিয়ে থাকি। ডেইলি বেসিস, উইকলি এবং মান্থলি। ওয়ান টু ওয়ান সার্ভিসের ফলে কায়েন্টদের কার পোর্টফোলিও কি অবস্থায়, তা আমাদের জানা থাকে। আমরা টেকনিক্যালি অনেকের তুলনায় আপডেট থাকি। ফলে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীকে আলাদা আলাদাভাবে তার সব ধরনের আপডেট দেওয়া যায়।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা
প্রত্যেকেরই স্বপ্ন থাকে প্রথম আবস্থানে থাকার। কিন্তু আমরা প্রথম হতে চাই না, বেস্ট ব্রোকার হতে চাই। যেমন আমাদের এখানে পরিবেশটা এমন যে সবাই নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করেই কাজ করে । আমাদের পরিকল্পনা বেস্ট হিউম্যান রিসোর্স তৈরি করা। শুধু প্রতিষ্ঠান ভালো আয় করবে এমন চিন্তা আমরা করি না। যেমন শেল্টেক ব্রোকারেজের প্রত্যেকটি কর্মীকে মান্থলি এবং ইয়ারলি ইনসেনটিভ দেওয়া হয়। অনেকরে তুলনায় এখানকার কর্মীরা  বেশ সুযোগ সুবিধা পায়।

আজকের বাজার: আরআর/ ২৯ এপ্রিল ২০১৭