তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্বচ্ছ প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সঠিক দিকনির্দেশনার দায়িত্বও পেশাগত হিসাববিদদের। ফলে বিনিয়োগকারীদের এবং পুজিবাজারের স্বার্থ রক্ষায় নিরীক্ষকদের আরো পুজিবাজারের স্বার্থে নিরীক্ষকদের আরো সচেতন হওয়া জরুরি বলে মনে করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।ৎ
বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০১৭’ উপলক্ষে শুক্রবার ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) উদ্যোগে আয়েজিত ‘পুঁজিবাজার ও অর্থনীতি: বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা’ বিষয়ক সেমিনারে এসব কথা বলেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি। অন্যদের মধ্যে বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা ও মো. আমজাদ হোসেন, নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সেমিনার সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুর রহমান মজুমদার।
বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, মুনাফা ও ঝুঁকির বিষয় বিবেচনা করে বিদেশীরা বিনিয়োগ করে থাকেন। এজন্য স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদনের গুরুত্ব অপরিসিম। ফলে আর্থিক প্রতিবেদনে বৈশ্বিক মান বজায় রাখার মাধ্যমে নিরীক্ষকরা বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। এ বিষয়টি নজর দিয়ে তাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে।
দেশের পুঁজিবাজারের অবস্থান তুলে ধরে এম খায়রুল হোসেন বলেন, সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যান অনুসারে, জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ২১ শতাংশ। বিগত বছরের তুলনায় বাজার মূলধন বাড়লেও তা দেশের অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি সঙ্গে আনুপাতিক হারে বাড়েনি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিক হলেও জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান কমেছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে কয়েক বছরে বিভিন্ন আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার করা হয়েছে। ফলে পুঁজিবাজার বর্তমানে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে। এখন বিনিয়োগ শিক্ষার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে পারলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সমানভাবে চলতে পারবে দেশের পুুঁজিবাজার।
দেশের পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত্ আশাব্যঞ্জক উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এবং বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগ (এফপিআই) বাড়ার সম্ভাবনার কারণেই এমনটি হয়েছে। এটি আমাদের পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক।
অনুষ্ঠানে বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, আর্থিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে পেশাদার হিসাববিদরা পুঁজিবাজারে ভূমিকা রাখছেন। তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের অনেক বেশি ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিএসইসির উদ্যোগের সঙ্গে আইসিএবি যৌথভাবে কাজ করছে।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তিতে অনাগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশী বিনিয়োগ উত্সাহিত করার নীতির কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে সরকার কঠোর হয় না। তবে তাদের পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে কৌশল নির্ধারণে কাজ করছি আমরা।
কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হলেও পুঁজিবাজারের মূলধনের সঙ্গে জিডিপির অনুপাতে আমরা বেশ পিছিয়ে। জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান বাড়াতে সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জ চেষ্টা করছে। বিভিন্ন নতুন পণ্য প্রচলন ও বিধিবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে নিরীক্ষকরাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন।
স্বাগত বক্তব্যে আইসিএবির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তফা কামাল এফসিএ বলেন, বিনিয়োগকারীরা অনেক সময় গুজবের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন। পরে এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অন্যদের দোষারোপ করেন। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিনিয়োগ শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের বাজার:জাকির/এলকে ৭ অক্টোবর ২০১৭