পূজায় জঙ্গি হামলার কোনো হুমকি নেই : র‌্যাব ডিজি

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় জঙ্গি হামলার কোনো হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) এম. খুরশীদ হোসেন।
জঙ্গিদের মনিটর করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো নাশকতার পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে র‌্যাব সদা প্রস্তুত রয়েছে। কথিত হিজরতের নামে যারা ঘর ছেড়েছে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘৫০ থেকে ৬০ জন যুবক ঘর ছেড়েছে। যারা ঘর ছেড়েছেন তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে। পূজার শেষে কিছুদিনের মধ্যে ভালো কিছু রেজাল্ট আমরা দিতে পারবো। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।’
গোয়েন্দা ও সাইবার তথ্য বিশ্লেষণ করে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলার তথ্য পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারপরও আমরা আত্মতৃপ্তিতে ভুগছি না। জঙ্গিদের যে কোনো নাশকতা নস্যাৎ করে দিতে বরাবরের মত প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব। আমরা সাইবার মনিটরিং করছি। গোয়েন্দা নজরদারি অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে।’
অতিরিক্ত আইজিপি এম. খুরশীদ হোসেন বলেন, জঙ্গিদের যে কোনো ধরনের নাশকতা মোকাবেলা করতে র‌্যাবের কমান্ডো টিম ও হেলিকপ্টার প্রস্তুত রয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর ২৭ নং রোড সংলগ্ন বনানী মাঠে গুলশান -বনানী সার্বজনীন দুর্গাপূজা উপলক্ষে (পূজামন্ডপ) ও র‌্যাব ফোর্সের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব ডিজি জানান, দুর্গাপূজায় অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, ভার্চুয়াল জগতে যে কোনো গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম পর্যবেক্ষণ করছে। যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য ডগ স্কোয়াডকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পূজামন্ডপসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্যুইপিং পরিচালনার পাশাপাশি র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, র‌্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিম ও র‌্যাবের এয়ার উইংয়ের হেলিকপ্টার প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের দিন র‌্যাবের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে।
র‌্যাব প্রধান এম. খুরশীদ হোসেন বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কোনোরূপ হামলা, পূজামন্ডপ ভাঙচুর বা পূজার উপকরণাদি ভাঙ্গা, ডাকাতি, চুরি ইত্যাদি সংগঠিত হলে জড়িতদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
গত ১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসব। আগামি ৫ অক্টোবর শুভ বিজয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পূজা।
র‌্যাব ডিজি বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা সবাই কাজ করে যাচ্ছি। এখানে সব ধর্মের, বর্ণের মানুষ যেন তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘেœ সম্পন্ন করতে পারে সেজন্য র‌্যাব ফোর্সেসসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা সজাগ রয়েছে।’
র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, র‌্যাবের ব্যাটালিয়ন গুলো নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তাদের অধিক্ষেত্রে স্থানীয় পূজা কমিটি, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রাখছে। র‌্যাব সদর দপ্তরে কন্ট্রোল রুমের (কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বর : ০১৭৭৭৭২০০২৯) মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ পূজামন্ডপগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমেও মনিটরিং করা হচ্ছে। সব মেট্রোপলিটন ও জেলা শহর এবং উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সব মেট্রোপলিটন শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরসমূহে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে।
এছাড়া পূজা মন্ডপসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আগত নারীদের ইভটিজিং ও যৌন হয়রানি রোধকল্পে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এতে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস্), অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন), পরিচালক (লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং), র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান, অধিনায়ক র‌্যাব-১, র‌্যাব সদর দপ্তরের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, গুলশান – বনানী সর্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের সভাপতি শ্রী পান্না লাল দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ ঘোষসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।