পোল্ট্রি শিল্পের কদর বাড়ছে

দিনে দিনে কদর বাড়ছে পোল্ট্রি শিল্পের। অনেক শিক্ষিত যুবকই এখন এ পেশায় ঝুঁকছেন। আছে দক্ষ জনবল। পাশাপাশি অদক্ষ অনেকেই নতুন করে সম্পৃক্ত হচ্ছে এ পেশার সঙ্গে। নতুনদের জন্য কিছু পরার্মশ।

১. খামারী সংগঠন
ইউনিয়ন পর্যায়ে পোল্ট্রি খামারি সংগঠন করে, প্রতিটি ইউনিয়নের সভাপতি ও মহাসচিব অথবা তাদের প্রতিনিধিকে সদস্য করে সংগঠিত হবে উপজেলা পোল্ট্রিশিল্প সংগঠনের কমিটি। এই কমিটির সদস্যগণ নির্বাচন করবে উপজেলা পোল্ট্রি সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিব। এভাবে উপজেলা সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিব অথবা তাদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত হবে জেলা সংগঠন। প্রতিটি জেলার সভাপতি ও মহাসচিব সমন্বয়ে গঠিত হবে জাতীয় পোল্ট্রিশিল্প সংগঠন। পোল্ট্রিশিল্পের উন্নয়নে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে মতবিনিময় ও পরামর্শ দিবে এই জাতীয় সংগঠন।

২. ভুট্টা সংরক্ষণ
দেশে উৎপাদিত ভুট্টা সংরক্ষণের জন্য সরকারি পর্যায়ে কিছু আধুনিক সংরক্ষাণাগার স্থাপনা করা উচিত। এতে ভুট্টা উৎপাদনকারিগণ সারাবছর যেমন ন্যায্যমূল্য পাবেন, তেমনি খামারিদের পোল্ট্রি খাদ্য মূল্য স্থিতিশীল থাকবে।

৩. ভেটেরিনারী সেল
পোল্ট্রি শিল্পে প্রয়োজনীয় ঔষধ, ভ্যাক্সিন, পুষ্টিসামগ্রি, ইত্যাদি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা। বর্তমানে ভেটেরিনারি ও মানুষের ওষুধ একই ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন এর অধীনে, যেখানে পোল্ট্রি গুরুত্ব পায় খুব কম। পোল্ট্রি অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে তাকে সময়মতো ওষুধ, পুষ্টি সামগ্রী, না দিতে পারলে সে মারা যাবে অথবা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পরবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আর সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের অবহেলায় ভেটেরিনারি পণ্যের আমদানি অথবা উৎপাদন পড়ে থাকে দিনের পর দিন। এক্ষেত্রে ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের প্রতিনিধি, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, অঐঈঅই প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি পৃথক ‘ভেটেরিনারি সেল’ তৈরি করে ভেটেরিনারি পণ্যের দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারলে উন্নতমানের ভেটেরিনারি পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত হবে। জাতীয় প্রাণিসম্পদ নীতিমালায় এই সেল এর কথা সুষ্পস্টভাবে বলা হলেও তার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অঐঈঅই কেই নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

৩. সরকারি পর্যায়ে পোল্ট্রি পণ্য ব্যবহার
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ঋঅঙ) এর মতে, প্রতিটি মানুষের বছরে কমপক্ষে ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশের মানুষ গড়ে বছরে ৭৫টি ডিম খায়। তারমানে এক্ষেত্রে এখনো আমরা পিছিয়ে আছি। সরকারি হাসপাতাল, প্রাইমারী স্কুলের টিফিনের সাথে ডিম গ্রহণ উৎসাহিত করে মানুষের পুষ্টিমান বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার পোল্ট্রিশিল্প কে সহযোগিতা করতে পারে।

৪. পোল্ট্রি বোর্ড গঠন
যেহেতু পোল্ট্রি একটি সংবেদনশীল শিল্প। তাই এর সাথে সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় দ্রুত এবং যথা সময়ে। সংশ্লিষ্ট সকলের যেমন- সরকার, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষক, সংগঠনের প্রতিনিধি, ইত্যাদি সকলের সমন্বয়ে একটি ‘পোল্ট্রি বোর্ড’ এ শিল্পকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে মুক্ত করে গতি এনে দিতে পারে।

৫. পোল্ট্রিবীমা
ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশের মত ‘পোল্ট্রি বীমা’ প্রচলন করলে, খামারি উন্নত খামার ব্যবস্থাপনায় উদ্বুদ্ধ হবেন।

৬. গ্রহণযোগ্য পরিসংখ্যান
পোল্ট্রি শিল্পের একটি গ্রহণযোগ্য ও উন্মুক্ত ও সমন্বিত পরিসংখ্যান প্রয়োজন। যেখানে থাকবে বিভিন্ন পোল্ট্রির সংখ্যা, প্রতিদিনের ডিম, ব্রয়লার, বাচ্চা, খাদ্য, ইত্যাদির উৎপাদন। হ্যাচারি ও ফিডমিলের উৎপাদন ক্ষমতা ও বর্তমান উৎপাদন। ওষুধ উৎপাদন এবং আমদানির সঠিক তথ্য। এছাড়াও প্রয়োজন ভোক্তা পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ের চাহিদা।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান ও বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের সাথে দীর্ঘকাল কাজের অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শগুলো দেয়ার চেষ্টা করলাম।