প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বাজার উন্নয়নে সহজ শর্তে ঋন সুবিধা দরকার

করোনাকালিন সময়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বাজার ভালো। কারণ, মানুষ এখন রেডি ফুডের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। লকডাউনের সময় আমাদের কারখানা খোলা রেখেছি। তবে কারখানা খোলা রাখতে আমাদের বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আমাদের স্টাফরা আতঙ্কিত ছিল। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের কর্ম ক্ষেত্রে যোগদানে সহযোগিতা করেছি। দেশের বর্তমান অবস্থায় খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান এবং চিকিৎসা সেবা পাওয়া আমাদের মৌলিক চাহিদা। আমরা খাদ্য নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারি। এই সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কারখানার কর্মীরা আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা করায় এর সফলতা পেয়েছি। আপনারা জানেন, আমাদের পণ্য শতভাগ রপ্তানি হয়। করোনাকালীন সময়ে আমাদের বৈদেশিক রেমিটেন্স অনেক কমে গেছে। বিদেশে যারা কর্মরত আছেন, করোনার কারণে তারা চাকুরিচ্যুত হয়েছেন। সেজন্য রেমিটেন্স পাঠাতে পারেনি। বর্তমানে শুধু আমরা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি করেই রেমিটেন্স দেশে এনে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারছি।

করোনাকলীন সময়ে সারা বিশ্বে বেকারত্বের হার অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে না। মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনেক লোক চাকরীচ্যুত হয়ে দেশে ফেরত এসেছে। সরকার যদি সহযোগিতা করে,এই একটি মাত্র খাত আছে, যার মাধ্যমে বেকারদের আমরা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবো। গার্মেন্টসের পরেই এই সেক্টর হচ্ছে সম্ভাবনাময় খাত, যা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সহজ হবে। আধুনিক মেশিনারিজ দিয়ে যদি আমরা উৎপাদন বাড়াতে পারি,সরকার যদি আমাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে,আমরা বিশ্বমানের খাদ্য উৎপাদন করতে পারবো। সরকার আমাদেরকে প্রণোদনা দেয়,এই প্রণোদনায় অনেক জটিলতা আছে। রপ্তানির পরে আমরা আরো সহজে কিভাবে প্রণোদনা পেতে পারি,সরকারকে সে বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এই এগ্রো সেক্টরে আরো উদ্যোক্তা বাড়াতে হবে। এগ্রো সেক্টরের অনেক প্রডাক্ট আছে। আমরা শুধুমাত্র বিস্কু্‌ট,চানাচু্‌র,মুড়ি,মসলা আচার এগুলো তৈরি করে এক্সপোর্ট করি।

মালয়েশিয়া,থাইল্যান্ড,সিঙ্গাপুর,ভিয়েতনাম,চায়নায় সাধারণত সিজনাল ফুডগুলোকে তারা ডিহাইড্রেট করে। আমাদের দেশে এই ধরণের কোনো প্লান্ট নাই। সারাবিশ্বে ডিহাইড্রেট ফুডের ব্যাপক চাহিদা। আমাদের এই সিজনে কাঁঠাল, আনারস অনেক সস্তায় পাওয়া যায়। এগুলো যদি আমরা প্রসেস করে, ডিহাইড্রেট করে, সারাবিশ্বে এক্সপোর্ট করতে পারি, তাহলে তা থেকে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। ইউরোপিয়ানরা এই ফ্রুটসগুলো খায়। উন্নত বিশ্বে ক্যান্ডির অনেক চাহিদা। আমাদের দেশে উন্নত মানের ক্যান্ডি তৈরি হয় না। এই প্রজেক্টগুলো হাজার কোটি টাকার। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে,তাহলে আমরা আশা করি সরকারকে দ্রুত রিটার্ন দিতে পারবো। আমাদের আভিজ্ঞ লোকের অভাব,আমরা যদি আভিজ্ঞ লোক পাই, তাহলে আরো বেশি উৎপাদন করতে পারবো।

কোয়ালিটি সংরক্ষণের জন্য সরকারের তরফ থেকে চাপ থাকে। সেজন্য আমাদের এখানে অনেকগুলো সংস্থা কাজ করছে। সবগুলো সংস্থা যখন ইনস্পেকশনে আসে, তখন আমরা হিমশিম খেয়ে যাই। যেমন খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা,বিএসটিআই,জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংস্থা, মোবাইল কোর্ট,এতগুলো সংস্থা না থেকে যদি একটা সংস্থা থাকতো, আমরা তার কাছে দায়বদ্ধ থাকতাম।

করোনা কালীন সময়ে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের স্টাফদের অফিসে আনার ব্যবস্থা করেছি। মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে এবং গণপরিবহন ত্যাগ করে আমাদের নিজস্ব পরিবহনে সহকর্মীদের অফিসে আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।

এবারের বাজেটে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আমাদের কিছু কাচামাল আমদানি করতে হয়। এই কাচামালের ওপর ট্যাক্স অনেক বেশি। আমাদের অ্যাসোসিয়েশন থেকে দাবি ছিল, কাচামালের উপর থেকে যেন ট্যাক্স কমানো হয়, কিন্তু কমানো হয়নি।

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যর উন্নয়নে সরকারকে এই খাতে নজর দিতে হবে। কারণ, আরএমজি’র পরেই প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সেক্টর সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। আমরা যারা উদ্যোক্তা আছি, আমাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। আমাদের ছোট-বড় সকল ঋণই সহজ শর্তে, বিশেষ করে জামানত বিহীন ঋণ দেয়া দরকার। তাহলে এই সেক্টরকে আমরা ইনশাআল্লাহ্ আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো বলে মনে করি।

মোস্তফা কামাল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রাজ কামাল গ্রুপ
পরিচালক, বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসর’স অ্যাসোসিয়েশন-বিএপিএ