বাংলাদেশ এখন নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশ। তবে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আর সেই লক্ষ নিয়েই বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমব কথা বলেন।
স্পীকার বলেন, রপ্তানি আয় এবং প্রবৃদ্ধি এখন ৬০ ভাগের উপরে। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং অর্জন দৃশ্যমান। দারিদ্র বিমোচনেও সফলতা আসছে। দারিদ্রের হার শতকরা ৪০ শতাংশ থেকে ২৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি, জেন্ডার সংবেদনশীল কাজে শিশুদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ সম্বলিত বাজেট, কৃষি অর্থনীতি এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে সুসংহতকরণ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রয়ন অনেক প্রকল্পসহ বাস্তবায়ন কছে সরকারে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদান থেকে শুরু করে সকল কিছুর একটি সমন্বিত প্রয়াস এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সুসংহতকরণ এবং এগিয়ে নেয়ার কাজটি করে চলেছি।
শিরীন শারমিন বলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০তম এই দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হবে। সম্মেলনের মূল প্রতিবাদ্যের মধ্যে অভিনবত্ব এবং নতুনত্ব রয়েছে বলে আমি মনে করি। এই প্রতিপাদ্য হলো ‘অর্থশাস্ত্র ও নৈতিকতা’।
তিনি বলেন, অর্থশাস্ত্র এবং নৈতিকতা এই দুটি বিষয়ের মধ্যকার যে যোগসূত্র বা সম্পর্ক সেটা অত্যন্ত জটিল। কেননা অনেক ক্ষেত্রেই এটাকে কনফ্লিক্টিং হিসেবেও মনে করা হয়। কিন্তু আমি মনে করি, আমরা কিভাবে অর্থনীতিটাকে বিশ্লেষণ করছি, সেটার উপরেও অর্থনীতি ও নৈতিকতার যোগসূত্র অনেকখানি নির্ভরশীল।
তিনি আরো বলেন, আমরা যদি অর্থনীতিকে শুধু প্রফিটের দিক থেকে বিশ্লেষণ করি তাহলে সেটা এক রকম করে দেখা হবে। কিন্ত অর্থনীতি এবং নৈতিকতা এই দুটি বিষয়কে যদি আমরা যুক্ত করতে চাই তাহলে বৃহৎ কিছু দাঁড়ায়।
স্পীকার বলেন, নৈতিকতার সঙ্গে অর্থনীতিকে যুক্ত করলে আমরা দারিদ্র বিমোচন এবং বৈষম্য নিরসনের কার্যকর পলিসি, নীতি, পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারি। আজ বিশ্ব অর্থনীতির দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, উন্নত দেশেও অর্থনৈতিক বৈষম্য রয়েছে। আমাদের যে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল্ড ছিলো, সেখানে বৈষম্য নিরসনের বিষয়টি সে ভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কিন্তু আজকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে বৈষম্য নিরসন বড় একটি বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যখন দারিদ্র বিমোচনের কথা বলছি, বৈষম্য নিরসনের কথা বলছি, শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের কথা বলছি, তখন সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতির দিকে তাকিয়ে এবং বিশ্বায়নের যে প্রভাব সেগুলোকে সমন্বয় করে সে বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে হবে। জানতে হবে রাইট থিংকগুলো কি। তবেই অর্থনীতির সঙ্গে নৈতিকতার সম্পর্কের তাৎপর্য প্রতিফলিত হবে।
রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে ৩দিন ব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বছর সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘অর্থশাস্ত্র ও নৈতিকতা’। সম্মেলন চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে অর্থনীতির বিভিন্ন শাখায় অসামন্য অবদান রাখায় দেশ বরেণ্য ৩ জন অর্থনীতিবিদকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি স্বর্ণপদক সম্মাননা ২০১৭ প্রদান করা হয়েছে। স্বর্ণপদক প্রাপ্তরা হলেন, ড. মাহবুব হোসেন (মরণোত্তর), অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরি।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরির সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথির ভাষণ দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ এফসিএ।
আজকের বাজার: আরএম/ ওএফ /এলকে ২১ ডিসেম্বর ২০১৭