সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ।
৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ‘নগ্ন দলীয়করণে বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা’ বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মওদুদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে দিন দিন আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটতেছে। যা আগে কখনো ভাবিনি।
প্রধান বিচারপতির ছুটির আবেদনকে ভুয়া ও জালিয়াতি দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন,প্রধান বিচারপতির অসম্মতিতে তাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এখন তাকে বিদেশ পাঠানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’ এর মাধ্যমে সরকার নিজেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মৃত্যু ঘটিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মওদুদ আহমেদ বলেন,সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশে করে এমন ভাষায় কথা বলেছেন যার নজির পৃথিবীতে আর নেই। আমরা ভেবেছিলাম এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন অসুস্থতার কথা বলে তার (এস কে সিনহা)অসম্মতিতে এক মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে লেখা প্রধান বিচারপতির আবেদনের কপি দেখিয়ে মওদুদ বলেন,গতকাল আইনমন্ত্রী ছুটির আবেদনের কপি দেখিয়েছেন। সাংবাদিকরা যার ছবিও তুলে রেখেছেন। কিন্তু সেই আবেদনে পাঁচটি ভুল রয়েছে। এই ভুলে ভরা আবেদনপত্রে তার মতো একজন দায়িত্বশীল লোক স্বাক্ষর করতে পারেন না। আর যে স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে সেটাও তার স্বাক্ষর না। এটা একটা লজ্জার ব্যাপার, রাষ্ট্রের এই পর্যায় থেকে ভুয়া তথ্য দেয়া হয়, এতটা জালিয়াতি।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তার আত্মীয় স্বজন, আইনজীবী নেতৃবৃন্দ কেউ সাক্ষাৎ করতে পারছে না দাবি করে মওদুদ বলেন, আইনজীবী সমিতির নেতারা প্রধান বিচারপতির বাসায় দেখা করতে গেলে তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। পরে আবার যখন খবর পাঠানো হলো পরে তাদের জানানো হলো তিনি সুস্থ আছেন। নানা কারণে তিনি কথা বলতে পারবেন না। তার বাসার টেলিফোন লাইনটিও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়াও ষড়যন্ত্র করছে সরকার।
বিএনপির এই নেতা জানান, আজ আমরা পাঁচজন বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে প্রধান বিচারপতির বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। বলেছি তার সঙ্গে আত্মীয় স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে পারছেন না। আমরা কি তাহলে বলবো প্রধান বিচারপতি গৃহবন্দী। একটি রায়কে কেন্দ্র করে তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।
ক্ষমতায় গেলে বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয়করণ করাসহ শিক্ষক কর্মচারীদের বেশকিছু দাবি প্রসঙ্গে মওদুদ আহমেদ বলেন,আপনারা যেসব দাবি করেছেন তা অত্যন্ত যৌক্তিক। আগামীতে আমরা ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই এসব বিষয় বিবেচনা করবো।
সেমিনারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন,প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সরকার ক্ষমাহীন গুণ্ডামি করেছে। বন্দুকের নল দিয়ে এসব করা হচ্ছে। তিনি ছুটি নেননি, অথচ বলা হচ্ছে তিনি ছুটি নিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন প্রধান বিচারপতি কোথায় আছেন তার খবর তিনি জানেন না, তাহলে কি প্রধান বিচারপতি গুম হয়ে গেল? গুমের যে কালচার, প্রধান বিচারপতিও যে গুম হননি তা বুঝবো কিভাবে। সরকারের লোকেরা আবার বলছেন যে, একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ থেকে এটাই মনে হয় যে, ষড়যন্ত্র মনে করেই তাকে সরিয়ে দিচ্ছেন।
সেমিনারে দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন,প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে আমার তর্ক হয়েছিলো। তিনি (এস কে সিনহা) আমাকে বলেছিলেন, ইনহ্যারেন্ট পাওয়ার প্রয়োগ করে আমাকে ফাঁসিও দিতে পারেন। আজকে শেখ হাসিনা তার ইনহ্যারেন্ট পাওয়ার এস কে সিনহার প্রতি দেখাচ্ছেন।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,যতদিন এই সরকার ক্ষমতায় আছে ততদিন আপনাদের (শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট) দাবি মানবে না। দেশের প্রধান বিচারপতি কেথায় আছন? এই রাষ্ট্র জানে? আইনমন্ত্রী জানেন? সিন্দাবাদের দৌত্য সরকারের ওপর চেপে বসেছে। এদেরকে সরাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়াসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৫ অক্টোবর ২০১৭