​ প্রস্তাবিত বাজেট বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা

এবারের বাজেট সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেশি। সরকারের রেমিটেন্স ড্রপ করেছে। আমদানি- রপ্তানি কমে গেছে। এইসব বিবেচনায় বাজেট চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে। বাজেটে ট্যাক্স বাড়াতে গেলে দ্রব্যমূল্যের দাম আরও বেড়ে যাবে। আবার যদি ট্যাক্স কমিয়ে দেয় সরকার তার খরচ চালাতে পারবে না। খরচ চালাতে না পারলে সরকারের ব্যাংক থেকে টাকা নিতে হবে। ঘুরে ফিরে সেই মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে। এই দুই ভাবে চিন্তা করলেই ব্যপারটা কঠিন। আমরা ব্যবসায়ীরা এই বাজেটে বড় ধরনের সুযোগ চাইলেও সরকার দিতে পারেনি। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্স ২.৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে যে, সুযোগ গুলি দেওয়া হয়েছে এডিবল অয়েল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ডিউটি কমানো হয়েছে। গত কয়েক মাস আগে থেকেই সরকার বাজার স্থিতি রাখার জন্য সরকার এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।গতবারের বাজেট যদি ধরে রাখা যায়। আমি বলব আমরা ভালো আছি।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি:
এটা সত্য যে দ্রব্যমূল্যের দাম যে, হারে বাড়ছে। সাধারণ মানুষের বেতন সে হারে বাড়ে নি। ইনকাম বাড়ছে না। বাসা ভাড়া,  যাতায়াত খরচ বাড়ছে। ভোজ্য তেল, বিদ্যু, গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। কোম্পানিগুলো তাদের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। যখন বৈশ্বিক মন্দা হয়। এবারের মন্দা হল মানুষ সৃষ্টি। যুদ্ধ ন্যাচারাল কোনো ইস্যু না। কৃত্তিম এই বৈশ্বিক মন্দা সারাবিশ্বব্যাপী চলছে। আমরা যুদ্ধ করতে গিয়ে আমাদের পৃথিবীকে মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছি। ইউক্রেন এবং রাশিয়া এই দুটো দেশ বিশ্বের২০-৩০ ভাগ গম এবং এডিবল অয়েল যোগান দেয়। রাশিয়া ইউরোপের জ্বালানি তেলের একটি বড় অংশ কন্ট্রোল করে। সব মিলে সাপ্লাই চেনে যুদ্ধের এফেক্ট পড়েছে।  গম ২৬০ ডলারে কিনেছি সেটা ৩৫০-৪০০ডলার পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। অনেক দেশ গম বিক্রি করছে না। ভোজ্যতেলের কথা বলতে গেলে প্রায় দ্বিগুন এর মত দাম বেড়ে গেছে। এখানে টেক্সট যদি শূন্য করে দেয় কোন লাভ নেই। কারণ দাম বিদেশে বেড়ে গেছে। সরকার এখানে ভর্তুকি দিতে পারে। সরকারের ইনকাম লাগবে তা না হলে ভর্তুকি কিভাবে দিবে।  টেক্স কমিয়ে দিয়ে খরচ চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সরকারের তেরি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন আরো সরকারের তো অনেক ধরনের কাজকর্ম রয়েছে। কারণ আমরা সৌদি আরব অথবা তেলসমৃদ্ধ দেশের মতো আমাদের রিজার্ভে প্রচুর পরিমাণে ডলার রিজার্ভ থাকেনা। এই মুহূর্তে সরকার এবং ব্যবসায়ীরা বেশি কিছু মনে হয় না করতে পারবে। দেশের ৩০ ভাগ জনগণ যারা সামর্থ্যবান তারা ভোজ্যতেলের ব্যবহার ২০% শতাংশ কমাতে পারে। এই ২০% কিন্তু মার্কেটে চলে যাবে। তখন মার্কেটে প্রাইস কিছুটা হলেও এডজাস্ট হবে। যখন ভোজ্যতেল কম কিনবেন তখন সাপ্লাই থেকে যাবে। ব্যবসায়ীরা রেগুলার প্রাইস বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। যেহেতু বৈশ্বিক মন্দা সবার একটু কষ্ট হবেই। এই কষ্টকে ধরে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেলে আমাদের ক্ষতি। আমাদের দেশ ট্রেড ডিপিসিট কান্ট্রি। আমাদের ইমপোর্ট বেশি এক্সপোর্ট কম। আপনি বলতে পারেন  আমরা ট্রেড ডিপিসিট কান্ট্রি হলে। এত রিজার্ভ কিভাবে এসেছে। এটার সফলতা শুধুই রেমিটেন্স। আমি রপ্তানি করছি ১০০ টাকার পণ্য। আমদানি করছি ১২০ টাকা। এখানে ২০ টাকা  চলে গেল। আমাদের রেমিটেন্স আসছে মনে করেন ২০০ টাকা। এখানে ১৮০ টাকা রেমিটেন্স যোগ হলো। আমাদের কর্মজীবী যারা বিদেশে শ্রম দিচ্ছেন বা ব্যবসা করছেন তাদের টাকাটাই আমাদের রিজার্ভের মূল ভিত্তি। ট্রেড ডিপিসিট কান্ট্রির সমস্যাটা হচ্ছে। আমরা আমদানি করছি বেশি রপ্তানি কম। ডলারের দাম যদি বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে আপনাকে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি নির্ভর করে মার্কেটের উপরে। মার্কেটে ডলারের সাপ্লাই এবং ডিমান্ডের উপর।

অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে। একটা হল বেসিক নিড। চাল, ডাল এগুলো নিত্য প্রয়োজনীয়। চকলেট কিন্তু বেসিক নিড না। বিদেশ থেকে আমরা বিভিন্ন ড্রিঙ্ক আমদানি করি। এগুলো তেমন জরুরী খাদ্য নয়। ধরুন একটা ড্রিঙ্কস আমি বাংলাদেশের কোম্পানি থেকে কিনলে ২০ টাকায় কিনব। সেখানে বিদেশি ড্রিংকস আমাকে ১০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। অথাৎ ৮০টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। আপনি শুনলে অবাক হবেন বাংলাদেশে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ড্রিংকস- কোলা বেভারেজ ইমপোর্ট হয়। ২৫০এম এল বিক্রি হয় আড়াইশো টাকায়।  বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির ড্রিংকস ১৫- ২০ টাকায় বিক্রি হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আড়াইশো টাকা দিয়ে আমি কেন বিদেশি ড্রিংকস কিনব। আমরা অনেকেই  সস, বিস্কিট বিদেশি ক্রয় করি। আমার কোম্পানির বিস্কিট  ইংল্যান্ড, কাতার, দুবাই, বাহারানে এক্সপোর্ট হয়। দুঃখজনক বিষয় হলো ইমপোর্টেড মিনারেল ওয়াটার  আমরা ২৫০ টাকা লিটার ক্রয় করি। এর ফলে আমাদের রিজার্ভে এফেক্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের যেসব পণ্য তৈরি হয় এই ধরনের পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি ডিউটি ট্যাক্স অনেক বাড়িয়ে দিতে হবে।  এ ধরনের পণ্য ইমপোর্ট হওয়ার কারণে আমাদের লোকাল প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে না।

শাখাওয়াত হোসেন মামুন
ভাইস চেয়ারম্যান
ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ