প্রিজনভ্যানে হামলাকারীদের চিনেন না ফখরুল

প্রিজন ভ্যান এবং অস্ত্র ভাঙচুর করে বিএনপির দুই নেতাকে যারা ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে তাদেরকে চেনেন না বলে দাবি করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি-কর্মী পরিচয়ে অনুপ্রবেশকারীরা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার হাইকোর্টের সামনে এই হামলার পরদিন নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ‘মঙ্গলবার যে ঘটনা ঘটেছে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এসেছে। আমরা নিজেরাই এই ছেলেদেরকে চিনতে পারছি না। আমরা আশঙ্কা করছি অনুপ্রবেশকারীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যে প্রতিবাদ জানাচ্ছি, রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করছি। সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই পরিবেশ নষ্ট করার জন্য কাজ করছে।’

আগের দিন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা শেষে ফেরার পথে হাইকোর্ট এলাকায় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় আটক দুই নেতাদেরকে ছিনিয়ে নিতে প্রিজন ভ্যানের দরজা ভেঙে ফেলে বিএনপির কর্মীরা। তারা একজন পুলিশ সদস্যের অস্ত্রও ভেঙে দেয়।

এই ঘটনায় পরে ৬৯ জনকে আটক করে পুলিশ। আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধেও মামলা হয়। রাতে গয়েশ্বরকে গুলশান এলাকা থেকে আটকের অভিযোগ করছে বিএনপি ও গয়েশ্বরের পরিবার।

ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে ভীতিকর বিষয় গত রাতে গয়েশ্বর রায়কে গ্রেপ্তারের ঘটনা অনেক রাত পর্যন্ত পুলিশ স্বীকার করেনি। তিনি একজন বয়স্ক মানুষ, অসুস্থ মানুষ। তার ওষুধগুলো পর্যন্ত সেখানে নিতে দেয়নি। সকাল পর্যন্ত তাকে ওষুধ নিতে দেয়া হয়নি।’

‘বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী তাকে দেখতে গিয়েছেন, তার বউমা দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুর রায় গয়েশ্বরকে দেখতে গিয়েছিলেন কিন্তু তাদেরকে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়নি। গয়েশ্বর রায়কে নিয়মিত মেডিসিন নিতে হয়। তাও নিতে দেয়নি।’

‘গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কেবলমাত্র স্থায়ী কমিটির সদস্যই নয়, তিনি দীর্ঘ দিন যুবদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতার যুদ্ধে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার অবদান ছিল। তাকে এভাবে হঠাৎ তুলে নিয়ে যাওয়া অশনি সংকেত।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই গ্রেপ্তারটা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। আমাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। অথচ গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে। দেশের যে স্থিতিশীল পরিবেশ নিজেরাই তা নষ্ট করছে।’

সরকার তার ‘একদলীয় শাসন’ পাকাপোক্ত করার জন্য অর্থাৎ বিএনপিকে বাদ দিয়ে বিরোধীদলগুলোকে বাদ দিয়ে একদলীয় নির্বাচন করার নীলনকশার দিকে এগুচ্ছে বলেও আশঙ্কার কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

‘বিএনপি নেতাদের বাসায় পুলিশের হানা’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আটকের পর বিএনপির আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার বাসায় গত রাতে পুলিশ হানা দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। যাদের বাসায় পুলিশ গেছে তারা হলেন: দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, দুই ভাইস চেয়ারম্যান জনাব আবদুল মান্নান ও নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক সিকদার, সাবেরা আলাউদ্দিন, যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজিজুল হাকিম।

এ ছাড়াও বিএনপির শত শত নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় রাতে পুলিশি তল্লাশির নামে ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ আনেন ফখরুল।

আজকের বাজার:এলকে/ ৩১ জানুয়ারি ২০১৮