প্রিয়া সাহার ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে দেয়া বক্তব্য প্রত্যাখান করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে ৩ কোটি ৭০ লাখ লোক মিসিং-এ কথা কোথাও নেই।

তিনি বলেন, প্রিয়া সাহার এই ধরণের বক্তব্য দেয়ার পেছনে অন্য কারো হাত আছে কি না সরকার তা খতিয়ে দেখছে। তিনি যখন দেশে ফিরবেন, তখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি কি উদ্দেশ্যে এসব বলেছেন, কেন বলেছেন, কি ইনফরমেশনের ভিত্তিতে বলেছেন, সেটা তাকে অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের আরো বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার ওই বক্তব্য সারাদেশে কনফিউশন সৃষ্টি করেছে।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ সচিবালয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়ে প্রিয়া সাহার দেয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যার প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন।

প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যে তথ্য দিয়েছেন তা সরকারি পরিসংখ্যান থেকে নেয়া। অধ্যাপক আবুল বারাকাত ওই পরিসংখ্যানে ভিত্তিতে ২০১১ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, যা সে সময়ে গণমাধ্যমেও আসে।

প্রিয়া তার ব্যাখ্যায় আরো বলেন, ‘এই কথাগুলো তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা। ২০০১ সালে যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চরম নির্যাতন চলছিল ৯৪ দিন ধরে, আজকের প্রধানমন্ত্রী তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী। তিনি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য সারা পৃথিবীতে ঘুরেছেন। সমস্ত জায়গায় বক্তব্য দিয়েছেন।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগে আলোচিত প্রিয়া সাহার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত। তিনি বলেন, প্রিয়া সাহা তার গবেষণার তথ্য-উপাত্ত বিকৃত করেছেন।

বিবৃতিতে আবুল বারকাত বলেন, ‘প্রিয়া সাহা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পত্র-পত্রিকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেশত্যাগ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমার নাম উল্লেখপূর্বক কিছু তথ্য-উপাত্ত বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন। ‘তার বক্তব্যের সাথে আমার গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্তের কোনো মিল নেই। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার গবেষণায় যা আছে তা হলো- আমার হিসেবে প্রায় পাঁচ দশকে (১৯৬৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত) আনুমানিক ১ কোটি ১৩ লক্ষ হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষ নিরুদ্দিষ্ট হয়েছেন (উৎস: আবুল বারকাত, ২০১৬, বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি, পৃ:৭১)। অর্থাৎ আমি কোথাও ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন-এ কথা বলিনি। উপরন্তু তিনি কোথাও বললেন না যে, আমার গবেষণা তথ্যটির সময়কাল ৫০ বছর (১৯৬৪-২০১৩)।’

আবুল বারকাত বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘প্রিয়া সাহা কখনও আমার সহ-গবেষক, গবেষণা সহযোগী অথবা গবেষণা সহকারী ছিলেন না। আমি ২০১১ সালে সরকারি আদমশুমারির তথ্যের ভিত্তিতে ১৯০১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মোট জনসংখ্যায় বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর আনুপাতিক হার উল্লেখ করেছি মাত্র।’

আবুল বারকাত আরও বলেন, ‘একজন সমাজ গবেষক হিসেবে আমি নিশ্চিত হতে চাই যে, প্রিয়া সাহা আমার নাম উল্লেখপূর্বক যেসব বিভ্রান্তিমূলক ও নীতি গর্হিত বক্তব্য দিয়েছেন তিনি অতি দ্রুত তা প্রত্যাহার করবেন। ’

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান