প্রেমে ব্যর্থ হয়ে রাউধার আত্মহত্যা

রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করতে আসা মালদ্বীপ কন্যা রাউধা আতিফ আত্মহত্যাই করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আসমাউল হক ১৬ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এর আগে দু’দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়, আন্তর্জাতিক এই মডেল আত্মহত্যা করেছেন।

রাজশাহী মহানগর জজ আদালতের পরিদর্শক আবুল হাশেম জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোমবার সন্ধ্যায় তাদের কাছে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে তা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত-১ এ উপস্থাপন করা হয়।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। রাউধাকে হত্যা করা হয়েছিল, এমনটিও বলা হয়নি। তাই বাদীপক্ষের আইনজীবী এই প্রতিবেদনে নারাজি দিতে চান। এ জন্য তিনি বিচারক মাহবুবুর রহমানের কাছে সময় প্রার্থনা করেছেন। তবে এ বিষয়ে আদালত কোনো আদেশ দেননি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আসমাউল হক জানান, দুই দফার ময়নাতদন্ত, ভিসেরা ও মুঠোফোন পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, রাউধা আত্মহত্যা করেছিলেন। এরপরই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তদন্ত শেষে এবং প্রতিবেদন দাখিলের আগে বিষয়টি রাউধার বাবাকেও অবহিত করা হয়েছে।

তিনি জানান, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই রাউধা আত্মহত্যা করেছিলেন। মালদ্বীপের শাহী গণি নামে যুবকের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই যুবক পড়াশোনার জন্য লন্ডনে থাকেন। রাউধার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে জানা গেছে, শাহীর সঙ্গে রাউধার সম্পর্ক ভেঙে যায়। এ নিয়ে প্রচণ্ড রকমের মানসিক চাপে ছিলেন রাউধা। আত্মহত্যার আগের রাতেও শাহীর সঙ্গে রাউধার কথা হয়েছিল।

অবশ্য রাউধার বাবা মোহাম্মদ আতিফ এখনও দাবি করছেন তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকে তিনি রাজশাহীতেই অবস্থান করছেন। কনকলতা নামে রাজশাহীর এক নারীকে তিনি বিয়েও করেন।

প্রসঙ্গত, রাউধা আতিফগত ২৯ মার্চ রাজশাহীর নওদাপাড়ায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রীনিবাস থেকে রাউধা আতিফের (২২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ওই কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মালদ্বীপের নীলনয়না মেয়ে রাউধা বাংলাদেশে এসেছিলেন পড়তে। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি মডেলিংও করতেন। রাউধার মৃত্যুর দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ শাহমখদুম থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে। রাউধার লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজশাহীতে দাফন করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাউধা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তা রাজশাহীতে দুদিন অবস্থান করে ঘটনা তদন্ত করেছিলেন।

রাউধার বাবা মোহাম্মদ আতিফ প্রথম ময়না তদন্তের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে গত ১০ এপ্রিল রাজশাহীর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় রাউধার সহপাঠী ভারতের কাশ্মিরের মেয়ে সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়। কিন্তু সিরাতকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ১৪ এপ্রিল হত্যা মামলাটি শাহমখদুম থানা থেকে সিআইডিতে হস্তাস্তর করা হয়। এরপর কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয়বারের মতো রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। সে প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন।

আজকের বাজার: আরআর/ ১৭ অক্টোবর ২০১৭