ফরদিপুরের ধোপাডাঙ্গা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ!!

এস এম জাকির হোসাইন, প্রতিবেদক:  ফরিদপুরের বোয়ালমারি’র ধোপাডাঙ্গা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমরুল কবির জিহাদের বিরুদ্বে অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। স্কুল পরিচালনা কমিটিসহ বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্যমতে, প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারিসহ পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা নিজের ব্যাক্তিগত তহবিলে রেখে, শিক্ষকদের বেতন ও ঈদ বোনাস বকেয়া রেখে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমে অস্থিরতা সৃষ্টি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি যশোদা জীবন দেবনাথ, নিজের একক প্রচেষ্টায় শিক্ষার মান উন্নয়নে বিগত সময়ে প্রায় নয় শত ছাত্র-ছাত্রীর টিউশন ফি নিজেই বহন করেন। শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলে উৎসাহ দিতে, জিপিএ-৫ পাওয়াদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ল্যাপটপ দেয়া হয়,তাঁর পক্ষ থেকে। অথচ সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন ফিসহ বিদ্যালয়ের ফান্ড নিয়ে ইদুর-বিড়াল খেলেন খোদ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে।

অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা না করার অভিযোগও আছে প্রধান শিক্ষক ইমরুল কবির জিহাদের বিরুদ্বে। পরিচালনা কমিটির সাথে আলোচনা ছাড়াই এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ড নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের লিখিত অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

২০১৫ সালে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কারনে ৭ এস এস সি পরীক্ষার্থী প্রধান শিক্ষক ইমরুল কবির জিহাদের বিরুদ্ধে তৎকালীন ইউএনও সহিদুজ্জামানের কাছে  লিখিত অভিযোগও করেন। সে সময়ে সরকারিভাবে পরীক্ষার নির্ধারিত ফি ধার্য ছিল ১ হাজার ৪০০ টাকা। যার বিপরীতে জিহাদের নির্দেশে ৩ হাজার ১৬৫ টাকা করে আদায় করা হয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। এ বিষয়ে ইউএনও অভিযোগ পাওয়ার পর, অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর চিঠিও দেন।

উল্লেখ্য গত ১২ আগস্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্ধারিত মিটিংয়ে জিহাদ কবির জানান শিক্ষকদের ৩ মাসের বেতন ও গত ঈদের বোনাস বকেয়া রয়েছে। কমিটি এর কারন জানতে চাইলে, বিদ্যালয়ের ফান্ডে টাকা নেই বলে জানান প্রধান শিক্ষক ইমরুল কবির। আর সে কারেণেই শিক্ষকদের বেতন ও বোনাস বকেয়া রয়েছে। পরে মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিজস্ব তহবিল থেকে শিক্ষকদের বকেয়া বেতন ও বোনাস’র অর্থ তুলে দেন। সে মিটিংয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি যশোদা জীবন দেবনাথ তদন্ত কমিটিকে জানুয়ারী থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সকল আয়-ব্যায়ের হিসাব তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে বেরিয়ে আসে, প্রধান শিক্ষকের আর্থিক অনিয়মের নানান তথ্য।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহবায়ক মো: সরওয়ার আজকের বাজারকে বলেন, তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৩০ টাকা আয় হয়েছে। যা এ সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা দেয়া হয়নি।

সরওয়ার আরো জানান, ১২ আগস্ট পরিচালনা কমিটির মিটিংয়ে প্রধান শিক্ষক ফান্ডে টাকা নেই বলে,তথ্য উত্থাপন করলেও, তদন্তের পর অনেকটা তড়িগড়ি করে ২২ আগস্ট প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে না এসে, প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা দেন।

প্রশ্ন হলো মাত্র ১০ দিনের মাথায় তহবিলে না থাকা অর্থ কোথা থেকে এলো? এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক ইমরুল কবির জিহাদ উদ্ভট সব কথা বলেন। তিনি জানান, সম্পূর্ণ টাকা বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে যদি জমা দেখানো হতো, তাহলে সভাপতির নিজস্ব তহবিল থেকে শিক্ষকদের জন্য বেতন-ভাতা আদায় করা সম্ভব হতো না। তাই তিনি বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে আয়ের অর্থ জমা না করে সময় ক্ষেপন করেছেন। আর এতে করেই বকেয়া রয়ে যায় শিক্ষকদের বেতন ও ঈদ বোনাস। তদন্তে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক সম্পূর্ণ অর্থ আত্বসাতের চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি কমিটির আহবায়কের ।

ধোপাডাঙ্গা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি যশোদা জীবন দেবনাথ’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয়ের আয়ের এত বড় অংক ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে ইমরুল কবির জিহাদ চরম অন্যায় করেছেন। কারন নিয়ম হচ্ছে ৫ হাজার টাকার বেশি হলেই, সেটা বিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে জমা করতে হবে। অথচ তিনি তা না করে মিটিংয়ে পুরো বিষয়টি এড়িয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে,যা পেশাগত অন্যায় আচরণ। তদন্তের মাধ্যমে এর সত্যতাও বেরিয়ে এসেছে।

সিআইপি যশোদা জীবন দেবনাথ বলেন, ব্যস্ততার কারণে সব মিটিংয়ে থাকা হয়ে ওঠে না।  কিন্তু ১২  আগস্ট মিটিংয়ে জানতে পারি,প্রধান শিক্ষক জিহাদ শুধু শিক্ষকদের বেতনই বকেয়া রাখেনি, বিগত ঈদের বোনাসও দেয়া হয়নি। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্বসাতের চেষ্টার প্রমান পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি। সভাপতি জানান,অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে শিগগিরই কারন দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। তার অপকর্মের ফলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হয়েছে। যা কোনও ভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়।

এদিকে প্রধান শিক্ষক ইমরুল কবির জিহাদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে, তিনি প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে তিনি ইনিয়ে-বিনিয়ে বলেন তা ম্যানেজিং কমিটির ব্যাপার,তদন্তাধীন আছে। ম্যানেজিং কমিটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা দেয়ার বিষয়ে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন ব্যাংকে টাকা জমা হয়েছে। ১২ আগস্ট পর্যন্ত বিদ্যালয়ের ফান্ডে টাকা নেই বলে ম্যানেজিং কমিটির বৈঠকে আপনার দেয়া তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে,অথচ আপনি ২২ই আগস্ট বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা জমা করেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধান শিক্ষক ইমরুল কবির জিহাদ  বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, কি হয়েছে, না হয়েছে তা ম্যানেজিং কমিটি বুঝবে। উল্লেখিত টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন আছে। কেউ হুট করে অভিযোগ দিলেইতো হবে না! অভিযোগেরও নিয়ম কানুন জানতে হবে বলে মন্তব্য তার।

শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইমরুল কবির জিহাদ এক পর্যায়ে ক্ষেপে গিয়ে মোবাইলে কথা বলতে আপত্তি জানান। সরাসরি দেখা করার অফার দেন আজকের বাজারের প্রতিবেদককে। পরবর্তীতে ইমরুল কবির নাম করা একটি বেসরকারী টেলিভিশনের এক সাংবাদিক দিয়েও এই প্রতিবেদককে ম্যানেজের চেষ্টা করেন।

একই বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক সুশীল কুমার কুণ্ডু আজকের বাজারকে বলেন, প্রধান শিক্ষক শুধু বিগত ৩ মাসের বেতনই বকেয়া রাখেনি। তিনি অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষার শিক্ষকদের সম্মানী ভাতাও বকেয়া রেখেছিলেন

আজকের বাজার:জাকির/এলকে/ ২৬ আগষ্ট ২০১৭