কবি-প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রী ফরিদা আখতারের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেয়ার যে অভিযোগ করেছে পুলিশ, তার প্রতিবেদন (প্রসিকিউশন) দেওয়ার জন্য আদালতের আদেশ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে পৌঁছেছে।
বুধবার ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এ আদেশ পৌঁছায় বলে জানায় ডিবির একটি সূত্র। সূত্র জানায়, মজহার দম্পতির বিরুদ্ধে গোয়েন্দা পুলিশ ২১১ ও ১০৯ ধারায় প্রসিকিউশন দেবে।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর ফরহাদ মজহার অপহরণ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রী ফরিদা আখতারের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করার অভিযোগ আনে আদালতে। গত ৭ ডিসেম্বর বিকালে ঢাকার মহানগর হাকিম খুরশীদ আলম এ ব্যাপারে প্রসিকিউশন দেওয়ার আদেশ দেন।
মজহার অপহরণ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অপহরণ অভিযোগের সত্যতা পায়নি পুলিশ। আদালতে ৭ ডিসেম্বর এই চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য ছিল।
তবে পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেছিলেন ফরিদা আখতারের আইনজীবী জয়নাল আবেদিন মেজবাহ। আবেদনে নতুন করে মামলার তদন্ত করারও দাবি জানানো হয়। আদালত ওই আবেদন খারিজ করে এই দম্পতির বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগের প্রসিকিউশন দেওয়ার আদেশ দেন। এ ঘটনার দুই দিনের মাথায় গত শনিবার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের ডেকে ফরহাদ মজহার দাবি করেন, তাকে দিয়ে পুলিশ তাদের লিখিত জবানবন্দি পড়িয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আজ বুধবার সন্ধ্যায় ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রী ফরিদা আখতারের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিবেদন (প্রসিকিউশন) দাখিলের জন্য আদালতের আদেশ পৌঁছেছে। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম ব্যবস্থা নেবেন।’
কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট), চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) এবং প্রসিকিউশন দেওয়া যায়। তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দিলে তা অন্য মামলার মতোই আমলে নিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ থেকে শুরু করে বিচার করবে আদালত। ২১১ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই ব্যক্তির দুই বছরের কারাদ- বা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত করতে পারেন আদালত। আর ১০৯ ধারা অপরাধের সহযোগীর জন্য প্রযোজ্য।
প্রায় তিন মাস তদন্ত শেষে ফরহাদ মজহার অপহরণ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম। একই সঙ্গে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ও হয়রানির অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে দ-বিধির ২১১ ও ১০৯ ধারায় প্রসিকিউশন দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়।
গত ৩ জুলাই ভোর সাড়ে পাঁচটার সময়ে শ্যামলীর রিং রোডের ১ নম্বর হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। পরে স্ত্রীকে নিজের মোবাইল ফোনে জানান, কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাকে মেরেও ফেলা হতে পারে। ঘটনার দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফরহাদ মজহার নিজেই স্ত্রীর কাছে মোট ছয় দফা ফোন করে মুক্তিপণ বাবদ ৩৫ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে বলে জানান।
এদিকে ফরহাদ মজহারের নিখোঁজের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে চারদিকে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই স্ত্রী ফরিদা আখতার বাদী হয়ে আদাবর থানায় অপহরণ মামলা করেন। এর আগে তিনি একই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এদিকে ফরহাদ মজহারের নিখোঁজের ঘটনা জানাজানি হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল ট্র্যাকিং করে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগরে হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
আজকের বাজার : এলকে/ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭