সকালে ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার। সেখান থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যায়। এরপর তার ফোন থেকেই বার বার পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন কলের মাধ্যমে চাঁদা দাবি করা হয়েছিল।
রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ফরহাদ মজহারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জয়েন্ট কমিশনার আবুল বাতেন।
তিনি আরও বলেন, মোবাইল ফোন নাম্বার ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমেই ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের জন্য খুলনায় অভিযান চালিয়েছে র্যাব ও পুলিশ। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর এই লেখককে ভিকটিম দেখিয়ে একটি নিয়মিত অপহরণ মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
আবুল বাতেন বলেন, ওই অপরহণ মামলায় শুনানির জন্য ফরহাদ মজহারকে আজই আদালতে তোলা হবে। সেখানে তার জবানবন্দি নেওয়া হবে। এই লেখকের দেওয়া জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী তদন্ত করা হবে। তদন্তের পর সঠিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে আজ বেলা ১১টার দিকে ডিএমপি উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেছিলেন, ফরহাদ মজহারের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার রাতেই আদাবর থানায় একটি অপহরণ মামলা হয়েছিল। ওই মামলার শুনানির জন্যই আজ তাকে আদালতে নেওয়া হবে।
তবে একই সময়ে ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিবি, মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ফরহাদ মজহার অপহরণ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১টার পর যশোরের নওয়াপাড়া থেকে উদ্ধারের পর আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ফরহাদ মাজহারকে ঢাকার আদাবর থানায় নেওয়া হয়। সেখানে থেকে সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাকে তেজগাঁওয়ের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
ফরহাদ মজহারকে আদাবর থানায় নেওয়ার পর তার স্ত্রী ফরিদা আখতারসহ তাদের স্বজনেরা সেখানে হাজির হয়েছিলেন। তখন ফরিদা আখতার জানিয়েছিলেন, ফরহাদ মজহারকে পরিবারের কাছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আদাবর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সুজিত কুমার সাহা জানান, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে একটি দল ফরহাদ মজহারকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে। তাকে আদাবর থানায় নেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে যশোরের অভয়নগরে খুলনা থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে উদ্ধার করা হয় ফরহাদ মজহারকে। আদাবর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হওয়ায় রাতেই ফরহাদ মজহারকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
উদ্ধার করার পর গতকাল দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটে খুলনার ফুলতলা থানায় সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ জানিয়েছিলেন, অপহরণ নয়; স্বেচ্ছায় ভ্রমণে ছিলেন ফরহাদ মজহার। তার ব্যাগে মোবাইল ফোনের চার্জার, শার্টসহ বেড়াতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া গেছে। ব্যাগ দেখে বোঝা যাচ্ছে, স্বেচ্ছায় ভ্রমণে এসেছেন তিনি। ফরহাদ মজহার সুস্থ আছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, অপহরণ নাটক সাজানো হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে ফরহাদ মজহারের পরিবারের পক্ষ থেকে রাজধানীর আদাবর থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল, ভোর ৪টার দিকে একজন পরিচিত ব্যক্তির ফোন পেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান লেখক ফরহাদ মজহার। এরপর থেকে তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
এরপর মোবাইল ফোন নাম্বার ট্র্যাকের মাধ্যমে ফরহাদ মজহারের সন্ধানে অভিযান অভিযান শুরু করে র্যাব ও পুলিশ।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফরহাদ মজহারের খোঁজে খুলনায় অভিযান শুরু করে র্যাব-৬। র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ফোন নাম্বার ট্র্যাক করে জেনেছেন, ফরহাদ মজহার খুলনায় অবস্থান করছেন। রাত ১১টার দিকে উদ্ধার অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেছিল র্যাব। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে নওয়াপাড়া থেকে ফরহাদ মজহারকে ‘উদ্ধার’ করা হয়।
আজকের বাজার: এলকে/এলকে ৪ জুলাই ২০১৭