যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলে স্থানীয় সময় রোববার সকালে আঘাত হেনেছে হারিকেন ইরমা৷ দেশটির ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার সূত্রে জানানো হয়েছে, ইরমা ‘ক্যাটাগরি-৪’ মাত্রার শক্তিসম্পন্ন এবং ঘণ্টায় এর গতিবেগ ২১০ কিলোমিটার৷ ফ্লোরিডায় আঘাত হানার আগে অল্প সময়ের জন্য হারিকেন ইরমা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়লেও, এখন আবার শক্তিসঞ্চয় করেছে৷
উপকূল থেকে মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানার সময় ইরমা যথেষ্ট শক্তিশালী থাকবে বলে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে৷ এটি বর্তমানে যেভাবে এগোচ্ছে তাতে তা সরাসরি সেন্ট পিটার্সবুর্গে আঘাত হানতে বলে মনে করা হচ্ছে৷ যদিও এর আগে ধারণা করা হয়েছিল যে, ইরমার সরাসরি গন্তব্য হতে পারে মিয়ামি, যেখানে ৫৫ লাখের মতো মানুষ বসবাস করেন৷
হারিকেন ইরমা আঘাত হানার আগে ফ্লোরিডার ৫৬ লাখের মতো মানুষকে অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ জর্জিয়া থেকে সরিয়ে নেয়া মানুষের সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি৷ তাদের জন্য অন্যত্র শিবির খুলেছে কর্তৃপক্ষ৷ ইরমাকে ‘সাংঘাতিক ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন’ ঝড় আখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “আমি এই ঝড়ের গতিপথে যারা রয়েছেন তাদের সবাইকে নির্দেশনা মানার অনুরোধ করছি৷ ইরমার পথ থেকে সরে যান৷ সম্পদ প্রতিস্থাপনযোগ্য, জীবন নয়৷ সবার আগে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা।”
ইরমা হচ্ছে এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত সবচেয়ে বড় অ্যাটলান্টিক হারিকেন। ফ্লোরিডার উপকূল বরাবর এটি বয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এ সময় ফ্লোরিডার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬ থেকে ১২ ফুট অবধি উঁচু ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে৷ এর আগে, ক্যারিবীয় অঞ্চলে হ্যারিকেন ইরমার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২০ ব্যক্তি, আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ সেখানে বাতাসের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের বাতাসের গতিবেগ মাপার যন্ত্রও ভেঙে যায়।
ঘূর্ণিঝড় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন দৃশ্য গত কয়েক বছরে দেখেননি তারা। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আটলান্টিক মহাসাগরে তিনটি হারিকেন তৈরি হয়েছে এবং সারিবদ্ধভাবে এগোচ্ছে। যার ফল হচ্ছে ভূমিধস।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র জানিয়েছে ইরমা, কাতিয়া ও হোসে এ তিনটি ঘূর্ণিঝড় একসঙ্গে এগোচ্ছে এবং একই সময়ে আঘাত হানবে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে।
তিনটি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ইরমা সবচেয়ে শক্তিশালী। আবহাওয়াবিদদের মতে শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়, যা আটলান্টিক মহাসাগরে তৈরি হয়েছে। এর ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ ও কিউবার উত্তর উপকূল। তবে ইরমা এখন আরও শক্তি সঞ্চয় করছে। ঘণ্টায় ২০৯ কিলোমিটার বেগে ধাবিত ঘূর্ণিঝড়টির কারণে ফ্লোরিডায় ব্যাপক ভূমিধস হবে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
সর্বশেষ ২০১০ সালে কার্ল, ইগোর ও জুলিয়া নামের তিনটি ঘূর্ণিঝড় আটলান্টিক মহাসাগরে তৈরি হলেও, এতো বেশি শক্তিশালী ছিল না। বিশেষ করে জুলিয়া খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে যায়। এবারই প্রথম তিনটি ঘূর্ণিঝড় একত্রে ধ্বংসযজ্ঞ করে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, এই শেষ নয়। ঝড়ের এ মৌসুমে আরও পাঁচ থেকে নয়টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে এই অঞ্চলে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
আজকের বাজার : এমএম / ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭