বগুড়ায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা

আগামী ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিন ব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হতে যাচ্ছে। শারদীয় দুর্গা উৎসবকে সামনে রেখে বগুড়ায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাকারিগররা। এ সময়ে দম নেওয়ার ফুরসত নেই কারিগরদের। এখন চলছে কাদামাটির দিয়ে প্রতিমার তৈরীর পর শুকানো হবে। তার পর প্রতিমাতেপড়বে রংতুলির আঁচড়।

করোনা মহামারিতে গত বছর দুর্গা প্রতিমার কারিগদের হাতে কাজ কম ছিল। গত বছর জেলায় ৬৩৫ টি দুূর্গা প্রতিমা তৈরি হয়েছিল। এ বছর এখন ৬৭৮ টি মন্ডপে পূজা হবে বলে জানান জেলা পূজা উদযাপন পরিষের সভাপতি দীলিপ কুমার দে। তিনি জানান এ বছর করোনার পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক হওয়ায় মন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। তা ছাড়া এবার প্রতিটি পূজা মন্ডপের জন্য সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫০০ কেজি চাল। পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাগর কুমার রায় জানান, প্রতিটি উপজেলায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে উৎসবে যোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

দুর্গা উৎসব আসলে এসব মৃৎশিল্পীদের কদর বেড়ে যায়। বছরের অন্যান্য সময় তারা কৃষি কাজসহ বিভিন্ন পেশায় কাজকর্ম করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।করোনাকালীন পরিস্থিতির মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করেছে এসব মৃৎশিল্পীরা। করোনা ভাইরাসের দুশ্চিন্তা থাকলেও সেপ্টেম্বর মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমার কারণে আনন্দ-উৎফুল্লতা নিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা প্রতিমা তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন তারা। সঠিক সময়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে হবে বলে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বাড়তি চার-পাঁচ জন শ্রমিক নিয়ে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বগুড়া দত্তবাড়ির প্রতিমা তৈরির কারিগর বলেন, এবার ৯ টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন। ‘সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে আমাদের কাজের গতি বেড়ে গেছে। এ পুরো মাস দম ফেরানোর ও সুযোগ কম আমাদের। তবে বছরের অন্য সময় মাটির কাজ থাকে না। এ এক দেড় মাসের আয় দিয়ে পুরো বছরের সংসার চলে। আমাদের মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা থাকলেও করোনায় অনেকে আর্থিক অনটনের পূজার সংখ্যা কমেগেছে। যে এলাকায় বিত্তশালীরা বাস করেন তাদের এলাকায় পূজা মন্ডপে প্রচুর অর্থ খরচ করেন। কারিগররা বলেন আগের মত তারা পারিশ্রমিক নেই যে কারণে আমাদের এ পেশায় থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে।’

বগুড়ার ডালপট্টিতে এবার পূজা উদযাপনের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জানান ,যার যে রকম সাধ্য সেই রকম খরচ হবে। লাইটিং, ঢাক-ঢোল, কাসর, পূজারীর খরচ, প্রতিমার খরচ, সব মিলিয়ে ছোট আকারে হলে ১ লাখ টাকা। এবং বিত্তশালীদের পূজাতে খরচ হবে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা। বগুড়া জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের তথ্য মতে, এবছর পুরো জেলায় ৬৭৮টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

বগুড়া জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি দীলিপ কুমার দেব জানান, ‘জেলায় এবার ৬৭৮টি ম-পে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা পাঁচ দিন ব্যাপী শারদীয় উৎসব পালন করব। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পূজার আনুষ্ঠানিকতা হবে। তবে করোনার আগে যেমন বাড়তি জাঁকজমকপূর্ণ হতো, সেটা হয়তো এবার হবে না। তবে গত বছরের চেয়ে একটু বেশি আনন্দ-উল্লাস থাকবে।’

শিবগঞ্জ উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুমার দত্ত বলেন, ‘শিবগঞ্জে এবার ৬০টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে। গতবারের চেয়ে ৫টি পূজা মন্ডপ বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার কারণে আমরা বড় দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ঈশ্বরের কৃপায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমায় পূজার আয়োজন ও প্রতিমা তৈরির কাজ শান্তিপূর্ণভাবে চলছে।

জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ জানান, শারদীয় দুর্গা উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপনের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা নেয়া হবে। জেলা পুলিশের পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে ধর্মীয় উৎসব কারার অনুরোধ জানানো হযেছে। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান