বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে রয়েছে ফরিদপুরে উদ্ধারকৃত কুমির

ফরিদপুরে উদ্ধার হওয়া সেই কুমিরটির আবাসস্থল হলো গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। বুধবার দুপুরে কুমিরটিকে সাফারি পার্কের কর্মকর্তারা বুঝে নিয়েছেন।

গত সোমবার ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ৩৮ দাগ এলাকার জলিল মোল্লার ডাঙ্গী গ্রামের জলাধার থেকে কুমিরটি উদ্ধার করা হয়। বুধবার দুপুরে কুমিরটিকে গাজীপুরের সাফারি পার্কের কর্মকর্তার কাছে বুঝিয়ে দেন সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবিরসহ কর্মকর্তারা।

হাওলাদার আজাদ কবির জানান, কুমিরটি উদ্ধারের পর ফরিদপুর থেকে খুলনায় নিয়ে আসা হয়। এটি একটি স্ত্রীলিঙ্গের কুমির। কুমিরটির দৈর্ঘ্য সাত ফুট ও চওড়া দেড় ফুট। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে পুরুষ কুমির রয়েছে সে কারণে উদ্ধার করা কুমিরটিকে সাফারি পার্কে রাখার সিদ্ধান্ত নেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তিনি আরও জানান, কুমিরটির সকল ধরনের পরীক্ষা শেষে সুস্থ্য অবস্থায় বুধবার দুপুরে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কর্মকর্তাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

এর আগে সোমবার দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ৩৮ দাগ এলাকার জলিল মোল্লার ডাঙ্গী গ্রামের জলাধারে ওই কুমিরটি একটি হাঁস খেতে আসলে এলাকাবাসী দেখতে পায়। তখন সবাই একত্রিত হয়ে কুমিরটিকে জাল দিয়ে আটক করে।

পরে ওই দিন সন্ধ্যায় উদ্ধার করা কুমিরটিকে ফরিদপুর থেকে নিয়ে যান খুলনার বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মো. মফিজুর রহমান চৌধুরী। রাতে বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে কুমিরটিকে রাখা হয়। পরদিন মঙ্গলবার কুমিরটির লিঙ্গ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। বুধবার দুপুরে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কর্মকর্তার কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

জলিল মোল্লার ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা আরশাদ শেখ বলেন, জলাধারের এক কোনার দিকে একটি হাঁস খেতে আসলে গ্রামের কয়েকজন দেখে সবাইকে খবর দেয়। পরে সকলে একত্রিত হয়ে জাল দিয়ে কুমিরটিকে আটক করে। গত ১৭ দিন আমরা খুব আতংকের মধ্য দিয়ে ছিলাম। এখন কুমিরটি আটক হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছি।

জানা যায়, ফালুর খাল হিসেবে পরিচিত ওই জলাধারে গত ২৪ জুলাই কুমিরটিকে দেখতে পায় এলাকাবাসী। এরপর গত ২৮ ও ৩১ জুলাই কুমিরটিকে ধরতে দুই দফা অভিযান চালায় প্রাণি সম্প্রসারণ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তারা। কুমিরটি জালে আটকা পড়ে, কিন্তু প্রতিবারই জাল ছিড়ে বের হয়ে যায় কুমিরটি। দুটি অভিযান পরিচালনা করা হলেও কুমিরটিকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

ওই এলাকার বাসিন্দা আসলাম হোসেন জানান, ২২ জুলাই সালাম খাঁর ডাঙ্গী গ্রামের জেলে হজরত মিয়া (৩৫) পদ্মা নদী থেকে আনুমানিক চার কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছ ধরেন। মাছটি তাজা রাখার জন্য মাছের মুখে দড়ি বেধে জলাশয়ের মধ্যে চুবিয়ে রাখেন। কিছুক্ষণ পর তিনি মাছটি তুলে আনার জন্য দড়ি ধরে টান দিলে ওই জলাধারে একটি কুমির দেখতে পান।

নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, কুমিরটি ধরার জন্য এর আগে দুটি অভিযান ব্যর্থ হয়। ফলে এলাকাবাসীর মনে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কুমিরটিকে এলাকাবাসী আটক করে। কুমিরটিকে প্রাণি সম্প্রসারণ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। কুমিরটি আটক হওয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে এলাকাবাসীর মাঝে। খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান