দেশের বিভিন্ন স্থানে সোমবার বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে দেশের জামালপুর, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, পাবনা ও রাজবাড়ী জেলায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, জামালপুর জেলার ইসলামপুর ও সরিষাবাড়ি উপজেলায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন, ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের দক্ষিণ চিনাডুলি গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের ছেলে বকুল মিয়া (২২) ও সরিষাবাড়ি উপজেলার শিবপুর গ্রামের আলেপ উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩৬)।
সরিষাবাড়ির মহাদান ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান জুয়েল বলেন, গ্রামের একটি জমিতে ধান কাটছিলেন হাবিবুর। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
আর উলিয়া পাইলিং ঘাটে ঘাস কাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই বকুলের মৃত্যু হয় বলে ইসলামপুরের নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বাদল জানান।
সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জামখোলা হাওরে এক ধান কাটা শ্রমিকের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী। নিহত ইয়াহিয়া আহমদ (৪২) সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার রায়পুর গ্রামের ইলিয়াছ আলীর ছেলে। কিছুদিন আগে ধান কাটার কাজে কানাইঘাট থেকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ আসেন তিনি।
ওসি ইখতিয়ার বলেন, সকালে ইয়াহিয়াসহ কয়েকজন শ্রমিক স্থানীয় জামখোলা হাওরে ধান কাটচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই ইয়াহিয়ার মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়রা তার লাশ উদ্ধার করে বলে জানান ওসি।
রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ঝাউগ্রামে মতিন শেখ নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয় বলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন আলী জানান।
তিনি বলেন, সকালে ক্ষেতে কাজ করছিলেন মতিন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন তিনি। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মতিন ওই গ্রামের মতু শেখের ছেলে।
রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় বজ্রপাতে কৃষক ইয়াকুব আলীর (৪০) মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার নওপাড়া গ্রামের আরজ উদ্দিনের ছেলে। সকালে বেগুনের খেতে কীটনাশক প্রয়োগ করার সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
পুঠিয়ার বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গাজী সুলতান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মাত্র পাঁচ মিনিটের ওই ঝড়ে তাঁর এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। ঝড়ের পর বৃষ্টি হচ্ছিল। তখন জমিতে কাজ করছিলেন ইয়াকুব। এ সময় বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া সহকারী আনোয়ারা বেগম জানান, ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৩০ নটিক্যাল মাইল। সকাল ৮টা ১৬ মিনিটে ঝড় শুরু হয়। চলে ৮টা ২১ মিনিট পর্যন্ত। এ সময় বজ্রসহ ভারী বর্ষণ হয়। সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর আর বৃষ্টি হয়নি। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রোদ ওঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালবৈশাখীতে আম, লিচুসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহীর পবা, গোদাগাড়ী, বাঘা, চারঘাটসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগুলোতে গাছপালা ভেঙে পড়া এবং কাঁচা ঘরবাড়ির টিনের চালা উড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গাছ ভেঙে পড়ে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে যান চলাচলও বন্ধ ছিল কিছু সময়।
রাজশাহীর ওপর দিয়ে কালবৈশাখী শুরুর পর গোটা শহর বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। আবার ভারী বর্ষণে নগরীর নিচু এলাকায় পানি জমে গেছে। এতে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। সকালের হঠাৎ ঝড়বৃষ্টিতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও কর্মস্থলমুখী মানুষকে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
রাজশাহী শহর থেকে পদ্মা নদী পার হয়ে পবা উপজেলার চরখিদিরপুরে প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত ‘আলোর পাঠশালায়’ যান শিক্ষক রিপন আলী। তিনি জানান, স্কুলে যাওয়ার জন্য সকালে উঠে অন্ধকারে রাস্তা দেখতে পাচ্ছিলেন না। ঝড়ের কারণে নৌকা ছাড়তে পারেনি। তাঁরা পাঠশালায় যেতেও পারেননি।
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে বজ্রপাতে দুইজন মারা গেছেন। সোমবার দুপুরে উপজেলার ভোলাব বন্দের বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাব্বির আহাম্মেদ জানান, দুপুর পৌনে ১টার দিকে প্রচণ্ড বেগে ঝড় শুরু হয়। এসময় ঘন ঘন বজ্রপাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে কাজ করতে মাঠে গেলে হাসেম মোল্লা (১৭) ও রফিকুল ইসলাম (৩৩) মারা যান। নিহত হাসেম মোল্লা ভোলাব বন্দের বাড়ি এলাকার কামাল মোল্লার ও রফিকুল ইসলাম একই এলাকার নুরুল হকের ছেলে।
এদিকে জেলার সোনারগাঁয়ে বজ্রপাতে ওবায়দুল হক (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সোমবার দুপুরে উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের মুসারচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওবায়দুল জামপুর ইউনিয়নের মুসারচর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে কৃষি জমিতে কাজ করছিল ওবায়দুল। হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এ সময় তার পাশে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক গুরুতর আহত হন। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হামীম শিকদার শিপলু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় বজ্রপাতে অজ্ঞাতপরিচয় (৩৩) এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টায় উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের হঠাৎপাড়ার পল্টুনঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে ওই যুবক পদ্মায় মাছ ধরতে যান। এসময় ওই এলাকায় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, মৃত যুবকের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে পাকশী পুলিশ ফাঁড়িতে একটি অপমৃত্যু মামলা হবে। এছাড়া মরদেহের পরিচয় না জানা গেলে পাবনা আঞ্জুমান মফিজুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হবে।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে তমিজ উদ্দিন (৩৫) নামে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এসময় তার সঙ্গে থাকা ৩টি গরুও ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সোমবার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের উত্তরভাগ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তমিজ উদ্দিন আদমপুর ইউনিয়নের উত্তরভাগ গ্রামের হাজী আব্দুল মতলিবের ছেলে। তিনি ওমান প্রবাসী বলে জানা গেছে।
আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদাল হোসেন জানান, তমিজ উদ্দিন ওমান প্রবাসী। কিছুদিন আগে তিনি ছুটি কাটাতে দেশে এসেছেন। দুপুরে হালকা বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির পাশের মাঠে গরু চরাতে যান তমিজউদ্দিন। এসময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এসময় তার সঙ্গে থাকা ৩টি গরুও মারা যায়।
কমলগঞ্জ থানার সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) গোলাম মোস্তফা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আজকের বাজার/একেএ