সস্তা জ্বালানিপণ্য হিসেবে কয়লা সুপরিচিত। এ কারণে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহারে উত্সাহী ছিল। দীর্ঘদিন ধরেই জ্বালানিপণ্যটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র ছিল চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। তবে এসব দেশে কয়লা ব্যবহারের উত্সাহে ভাটা পড়েছে। মূলত পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধজনিত সচেতনতা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহার থেকে সরে আসছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। স্বাভাবিকভাবেই বদলে যাচ্ছে পণ্যটির বৈশ্বিক বাজার। ইউরোপ, আমেরিকায় চাহিদা কমার বিপরীতে ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পণ্যটির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। খবর রয়টার্স।
আইইএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এককভাবে কয়লা ব্যবহারে শীর্ষে রয়েছে চীন। তবে ২০৪০ সাল নাগাদ পণ্যটির বৈশ্বিক বাজার পুরোপুরি বদলে যাবে। ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় কয়লার সম্মিলিত ব্যবহারের পরিমাণ চীনকে ছাড়িয়ে যাবে। আর এ ব্যবহারের সিংহভাগই হবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে সমালোচনা সত্ত্বেও ২০৪০ সাল নাগাদ এ অঞ্চলের দেশগুলোয় আরো ১০০ গিগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণে ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় কয়লার ব্যবহার বাড়বে। এ লক্ষ্যের ৪০ শতাংশই এককভাবে ইন্দোনেশিয়ায় পূরণ করা হবে। ফলে দেশটিতে কয়লা ব্যবহার বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ হবে।
২০৪০ সাল নাগাদ ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় বার্ষিক কয়লা ব্যবহার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ হারে বাড়বে। এ সময় এসব দেশে ৩৮ কোটি ৭০ লাখ টন অতিরিক্ত কয়লা ব্যবহার হবে। বাড়তি চাহিদা পূরণে এ সময় এসব দেশে কয়লা আমদানির সম্মিলিত বার্ষিক পরিমাণ ৩৭ কোটি ৫০ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে আইইএ। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় পণ্যটির সম্মিলিত বার্ষিক আমদানি ২৮ কোটি ৪০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে, যা বর্তমানের তুলনায় ৭২ শতাংশ বেশি। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সম্প্রতি থাইল্যান্ডকে টপকে ভিয়েতনাম কয়লা আমদানিকারকদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। ২০৪০ সাল নাগাদ দেশটি তালিকার শীর্ষে চলে যাবে। থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনেও পণ্যটির আমদানি বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই আগামী দিনগুলোয় কয়লার বৈশ্বিক বাণিজ্য পশ্চিম ছেড়ে পূর্বমুখী হবে বলে মনে করছে আইইএ।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাকৃতিক গ্যাস কিংবা জ্বালানি তেলের তুলনায় সস্তা হওয়ায় এ অঞ্চলের দেশগুলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঝুঁকছে। অন্যদিকে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো পণ্যটির ব্যবহার ক্রমে কমিয়ে আনছে। এ কারণেই ২০৪০ সাল নাগাদ কয়লার বৈশ্বিক বাণিজ্য পশ্চিমের দেশগুলো থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর করায়ত্ত হবে।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১ নভেম্বর ২০১৭