বন্দর ব্যবস্থাপনার দূর্বলতায় রপ্তানী আয় ফের চলে যাচ্ছে বিদেশে

মাদারভ্যাসেলগুলো বহির্নোঙরে বেশিদিন অবস্থান করার কারণে ডেমারেজ হিসেবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। আমরা যেটা আয় করছি, সেটা আবার বিদেশে চলে যাচ্ছে। এতে করে দেশ উপরে যাচ্ছে না, নিচের দিকে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম চেম্বার প্রতিনিধি অঞ্জন শেখর দাশ।

বৃহস্পতিবার ২৮ ডিসেম্বর বিকেলে বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজ হতে দ্রুত সার খালাসকরণের লক্ষ্যে লাইটার জাহাজের সুষ্ঠু ব্যবহার ও লাইটার জাহাজ সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা বন্দর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বন্দর সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর জুলফিকার আজিজ, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক, নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম, কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নাহিদা ফরিদী, বিএডিসি চট্টগ্রামের যুগ্ম পরিচালক একে সামশুদ্দিন, বিসিআইসি’র জেনারেল ম্যানেজার (সার ব্যবস্থাপনা) মো. মনজুর রেজা, এফবিসিসিআই’র প্রতিনিধি মাহফুজুল হক শাহ, চেম্বার প্রতিনিধি অঞ্জন শেখর দাশ, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী, সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আখতার হোসেন, ডব্লিউটিসি’র কো কনভেনর নুরুল হক, লাইটারেজ ঠিকাদার সমিতির সভাপতি হাজী শফিক আহমদ, বিএসআরএম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তপন সেনগুপ্ত, বন্দর ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার এনামুল করিমসহ বন্দর সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য রাখেন।

সভায় আগামী মৌসুমে বহির্নোঙরে জাহাজ হতে দ্রুত লাইটারিং করতে লাইটারেজ জাহাজ সরবরাহে অগ্রাধিকার দেয়া, নতুন জাহাজ আমদানির সুবিধার্থে নির্ধারিত সময়ের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া, সিইউএফএল এর জেটিতে সার খালাসের পদক্ষেপ নেয়া, সার খালাস সহজতর করতে বিসিআইসি ও বিএডিসির মধ্যে সমন্বয় করে নীতিমালার পরিবর্তন করা নিয়ে আলোচনা হয়।

৫ সিদ্ধান্ত- আগামী মার্চের মধ্যে সদরঘাট এলাকায় ৪০০ মিটার লাইটারেজ জেটিতে চারটি ও ৭৫ মিটারের অতিরিক্ত আরেকটি জেটিসহ মোট ৫টি জেটির কার্যক্রম শুরু, নতুন লাইটারেজ জাহাজ নির্মাণ এবং সংকট কাটানোর আশু ব্যবস্থা গ্রহণে ক্রয় বা ভাড়া করা, আগামী সপ্তাহের মধ্যে সিইউএফএল জেটিতে সার খালাস করে সড়কপথে গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ, পরবর্তীতে খরচ বিশ্লেষণ করে সিইউএফএল জেটি নিয়মিত ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে, বিএডিসি ও বিসিআইসি সার বোঝাই যতগুলো লাইটারেজ জাহাজ বর্তমানে বসে আছে সেগুলো দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

মাহফুজুল হক শাহ বলেন, বহির্নোঙরে কোনভাবে কার্গো ভ্যাসেলের জটিলতা সহনীয় পর্যায়ে আনা যাচ্ছে না। আগে ৯০ লাখ থেকে এক কোটি টন কার্গো আমদানি হতো। কিন্তু বর্তমানে কার্গো আমদানি অনেক বেড়ে গেছে কিন্তু সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় লাইটারেজ ও জেটি বাড়েনি। লাইটারেজের সঠিক পরিসংখ্যা কারো কাছে নেই। ডব্লিউটিসি অনাথ ছেলের মতো। লাইটারেজ পরিচালনাকে একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। জাহাজ মালিকরা চাইলে দুই মাসের মধ্যে জাহাজ আমদানি করতে পারবে। এজন্য শূন্য ডিউটিতে জাহাজ আমদানির সুযোগ করে দিতে হবে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লাইটার জেটির সংলগ্ন এলাকাটি ড্রেজিং করা হবে। আমরা আশা করছি আগামী মার্চের মধ্যে ৪০০ মিটার লাইটার জেটি অপারেশনে যাবে। আরেকটি ৭৫ মিটারের জেটি তৈরি হয়েছে। সদরঘাটে স্ক্র্যাপ ও খাদ্যকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

বিমানবন্দর সংলগ্ন ইনকনট্রেড কন্টেইনার ডিপো পেছনে ১৬ একর জায়গা জুড়ে আরেকটি লাইটারেজ জেটি নির্মাণ করা হবে। এটি আগামী ৬-৮ মাসের মধ্যে আরো ৩-৪টি জেটি হয়ে যাবে।

এবার সারকে প্রাধান্য দিতে হবে। তা নাহলে সার নিয়ে সংকট তৈরি হবে। অতিদ্রুত নতুন কিংবা পুরোনো জাহাজ আমদানির জন্য স্বল্পসময়ের মধ্যে ডিউটি মুক্ত করার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে আলাপ করতে হবে।

অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, দেশ প্রতিনিয়ত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে নিয়মিতভাবে কার্গো আমদানি বাড়ছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে লাইটারেজ জাহাজ সংযোজন করতেই হবে। লাইটারেজ তৈরি কিংবা আমদানি করার বিষয়ে নীতিমালা সহজতর করা প্রয়োজন। দ্রুততম সময়ে নির্মাণ কিংবা আমদানি করে ৩০০ লাইটারেজ জাহাজ সংযোজনের অনুমোদন দেওয়া হোক। ডিউটি ফ্রি কিংবা সাশ্রয়ী ডিউটি দিয়ে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ মাদারভ্যাসেলগুলো বহির্নোঙরে বেশিদিন অবস্থান করার কারণে ডেমারেজ হিসেবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। আমরা যেটা আয় করছি, সেটা আবার বিদেশে চলে যাচ্ছে। এতে করে দেশ উপরে যাচ্ছে না, নিচের দিকে চলে যাচ্ছে।

বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক যুগ্ম পরিচালক একে সামশুদ্দিন বলেন, সার সরবরাহে সংকট কিছুটা কেটেছে। গত ১০ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে সার পরিবহনের জন্য ডব্লিউটিসি থেকে ৪৭টি লাইটার চাওয়া হয়েছিল। তন্মধ্যে পাওয়া গেছে ৪৩টি। খালাস হয়েছে ১৭টি, খালাস চলমান আছে ৯টি এবং খালাসের অপেক্ষায় আছে ১৬টি লাইটার। ১৮ ডিসেম্বর আসা জাহাজটিতে এখনো লাইটারেজ বরাদ্দ পাইনি।

তিনি বলেন, গুদামের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। বহির্নোঙরে জাহাট জটের কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

বিসিআইসি’র জেনারেল ম্যানেজার (সার ব্যবস্থাপনা) মো. মনজুর রেজা বলেন, ১২ থেকে ১৫ লাখ মেট্রিক টন সার প্রতিবছর আমাদের আমদানি করতে হয়। প্রয়োজনের কারণে ব্যাগিং ছাড়াই আমাদের বাল্কে সার আমদানি করতে হচ্ছে।

ডব্লিউটিসির কো-কনভেনর নুরুল হক বলেন, বর্তমানে ইউরিয়া নিয়ে ৮টি, এমওপি সার নিয়ে ৬টি, টিএসপি নিয়ে ৭টি এবং ডিএপি নিয়ে ৮টি মাদারভ্যাসেল রয়েছে। সাম্বা নামের জাহাজটি ৬ আগস্ট থেকে ১১ হাজার ২০০ টন সার খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া নেভিয়াস নামের জাহাজ থেকেও ৫ হাজার ৩০০ টন সার খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না।

সিটি গ্রুপ নিজেদের জাহাজ খালাস করে আমাদের ৭০-৮০টি জাহাজ বসিয়ে রাখছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আজকের বাজার : এলকে/ ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭