বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩২০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাংক এ হিসেব দিয়ে বলেছে, বন্যা, পাহাড়ধস, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসনে বাংলাদেশকে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ দিতে চায় তারা।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দিয়ে সম্প্রতি নতুন একটি ঋণ প্রস্তাব দিয়েছে এই বৃহত্তম দাতা সংস্থাটি। এই ঋণের পরিমাণ ২৫ কোটি ডলার বা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা, যা বাজেট সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে।
বিশ্বব্যাংকের এই বাজেট সহায়তার প্রস্তাব ইতোমধ্যে পর্যালোচনা শুরু করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি)। অন্য নমনীয় বা সহজ শর্তের ঋণের মতো এই ঋণেও শর্ত শিথিল থাকবে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ জুলাই বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বাজেট সহায়তার ঋণ প্রস্তাব নিয়ে ইআরডি কর্মকর্তাদের সামনে একটি উপস্থাপনা দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে এই ঋণ পাওয়া যাবে। আইডিএ থেকে নিয়মিত যে ঋণ বাংলাদেশ পায়, এই অর্থ তার বাইরে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এটি হলে দুর্যোগ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থায়নের আরেকটি উৎস পাবে বাংলাদেশ। ঋণটি পেতে কোনো সময়ক্ষেপণ হবে না, অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে অর্থ ছাড় হবে।
দুর্যোগ-পরবর্তী তাৎক্ষণিকভাবে ওষুধ ও খাদ্য আমদানি, অবকাঠামো নির্মাণসহ যে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজন থাকে, তা মেটাতে বিশ্বব্যাংকের এই তহবিল ব্যবহার করা যাবে উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এটি অনেকটা বিমা ব্যবস্থার মতো।’
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি তিন বছরের জন্য আইডিএ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সহজ শর্তের ঋণ পায় বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত আইডিএতে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪৩০ কোটি ডলার। আগামি তিন বছরেও একই পরিমাণ বরাদ্দ থাকবে বলে জানা গেছে। তবে এই ঋণ নির্দিষ্ট প্রকল্পের বিপরীতে পায় বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি আরও ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা হিসেবে দিতে চায় বিশ্বব্যাংক।
ঋণটি নিতে বাংলাদেশ রাজি থাকলে আগামি তিন বছর দেশে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে তাৎক্ষণিকভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যেমন অর্থ পাওয়া যাবে, পাওয়া যাবে পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্যও।
এই ধরনের তহবিল পেতে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকে আগে থেকেই বিশ্বব্যাংককে জানাতে হয়, কোন ধরনের দুর্যোগে, যেমন বন্যা, ভূমিকম্প, পাহাড়ধস, ঘূর্ণিঝড়, খরায় এই সহায়তা চায়।
বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রস্তাবটি পাওয়ার পরপরই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগকে মতামত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে ইআরডি। কোন কোন দুর্যোগে বিশ্বব্যাংকের এই তহবিলের অর্থ ব্যয় করা যাবে, তা ঠিক করতে শিগগির আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠকও ডাকবে ইআরডি।
বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প ও খরাপ্রবণ দেশ। ২০১৭ সালের বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকিসূচক অনুযায়ী, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সারা বিশ্বে ষষ্ঠ। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩২০ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ২ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, ২০০০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশে যত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে, তাতে সব মিলিয়ে ১ হাজার কোটি ডলার বা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ত্রাণ, পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণে এই সময়ে তহবিল মিলেছে মাত্র ২০০ কোটি ডলার বা ১৬ হাজার কোটি টাকা।
আজকের বাজার: আরআর/ ২৭ আগস্ট ২০১৭