বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে: সরকারি দল

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাঁরা বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। গত ৯ জানুয়ারি চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে সরকারি দলের সদস্য আ স ম ফিরোজ তা সমর্থন করেন। গত ৯ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ ও এ বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে ভাষণ দেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আজ আলোচনায় অংশ নেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, সরকারি দলের সদস্য শেখ সালাহ উদ্দিন, মো. মোতাহার হোসেন, ইসরাফিল আলম, শহীদুজ্জামান সরকার ও শফিকুল আজম খান।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন তার মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর দীর্ঘ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে তিনি ৩৬ হাজার ১৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করেন। পরবর্তীতে অনেক সরকারই এসেছে-গেছে কিন্তু কোন সরকারই শিক্ষার দিকে কোন নজর মেয়নি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করে আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্কুলে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ, উপবৃত্তি প্রদান, বিনামূল্যে বইসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করছে।‘মিড ডে মিল’প্রকল্পের আওতায় মুজিব বর্ষে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের দুপুরের টিফিন দেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আমলে যে স্কুলগুলো করে গেছেন এরপর আর কোন স্কুলের উন্নয়ন বিএনপির আমলে হয়নি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তারা কোন শিক্ষক নিয়োগ দেননি। ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৬৪জন শিক্ষক আমরা নিয়োগ দিয়েছি।

তখন সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৪জন। বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৭ জন। বিএনপির আমলে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না, কিন্তু আমরা প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করেছি। ৩৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮৪ জন প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তি আছেন। বিদ্যালয় বিহীন গ্রামে ১ হাজার ৪৯৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিদ্যালয় বিহীন এলাকায় আরো ১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এ জন্য ডিপিপি প্রস্তুত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ৮৫ হাজার শিক্ষককে স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।

সরকারি দলের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রপতির ভাষণকে সময়োপযোগি উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতেৃত্বে গত ১১ বছরে দেশের বিভিন্ন খাতে অর্জিত ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। এ সময়ে দেশে শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য সেবা, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ খাদ্য, শিল্প ব্যবসা বাণিজ্য, জ্বালনি ও বিদ্যুৎ, গ্রামীন অবকাঠামোসহ সব খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারী বান্দব নীতিমালার ফলে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন সূচকে বাংলাদেশকে বিশ্বে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তার পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য নিরসন হয়েছে।

বিশেষ করে তারা খাদ্য, কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার আমলে দেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে বিদ্যুতের জন্য মানুষকে গুলি খেয়ে পাণ দিতে হয়েছে। আর এ সরকারের আমলে সারা দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এখন আর জনগণকে বিদ্যুতের দাবি করতে হচ্ছে না। বিনা খরচে সব জায়গায় বিদ্যুৎ পৌছে দেয়া হচ্ছে। এতে দেশে শিল্প, বাণিজসহ বিদ্যুৎ নির্ভর সব খাতের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে।

সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশে পরিনত হয়েছে। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় কৃষি উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মৎস্য উৎপাদনে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মাংস, ডিমসহ অন্যান্য ভোগ্য পণ্যে বাংলাদেশ দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে যাচ্ছে। তারা বলেন, শুধু তাই নয় এখন শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। প্রতি বছরের শুরুর দিন ২ কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দেয়া হচ্ছে। বিদ্যালয় গমনোপযোগি সব শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। এরাই একদিন আলোকিত মানুষ হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নও নিশ্চিত করেছেন। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সেশন জট নিরসন করা হয়েছে। আর কর্মসংস্থানে ব্যপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান