২০২১ সালের মধ্যে বন্দরকে আরো গতিশীল করতে নতুন দিগন্তের দিকে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। নানাবিধ সমস্যা কাটাতে এবার বন্দরের বহির্নোঙরে ‘সী-টার্মিনাল’ নির্মাণের পথে হাঁটছে বন্দর। ইতোমধ্যে ফ্রি-ফিজিবিলিটি সম্পন্ন করার পর এবার ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য কনসালটেন্ড নিয়োগ করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ইতিবাচক প্রতিবেদন ফেলেই দ্রুততম সময়ে এ ধরণের ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করবে তারা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ‘টেকনো-ইকোনোমিক ফিজিবিলিটি স্টাডি অব এ ফ্লোটিং হার্বার অ্যাট দ্যা আউটার অ্যাঙ্কারেজ এরিয়া (বে অব বেঙ্গল) ইন চিটাগং পোর্ট’ বিষয়ক সমীক্ষা কাজের জন্য চলতি বছরের ২ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক দরখাস্ত (ইওআই) আহবান করে বন্দর। ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৪টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সমীক্ষা কাজটি করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে শর্টলিস্ট করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে পাবলিক ডোমেইন আর্কিটেক্টটেন- নেদারল্যান্ড, ডব্লিউটিএম ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল জিএমবিএইচ- জার্মানি, য়্যুশিন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন- দক্ষিণ কোরিয়া, ডি’অ্যাপোলোনিয়া এসপিএ- ইতালি এবং এসএমইসি ইন্টারন্যাশনাল প্রা. লিমিটেড- অস্ট্রেলিয়া। যাবতীয় অভিজ্ঞতা যাচাই পরবর্তী নেদারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান পাবলিক ডোমেইন আর্কিটেক্টটেনকে ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়। এতে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরায় এম. খালেদ ইকবাল এবং পাবলিক ডোমেইন আর্কিটেক্টটেন- নেদারল্যান্ড এর প্রধান নির্বাহী পিটার বিগডর নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
জানা গেছে, সী-টার্মিনাল নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি নির্মাণে চুক্তির মেয়াদ ধরা হয়েছে ৬ মাস। সমীক্ষার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ পাবলিক ডোমেইন আর্কিটেক্টটেন- নেদারল্যান্ডকে ৯ লাখ ৭২ হাজার ৪৭৮ মার্কিন ডলার পরিশোধ করবে। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার মতো।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে এতে রাত-দিন কন্টেইনার হ্যান্ডলিং অপারেশন করা যাবে। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের কন্টেইনারগুলো বহির্নোঙর হতে খালাস করা যাবে, এতে লাইটারিং সমস্যা কেটে যাবে। বন্দরের গতিশীলতা বাড়বে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সী-টার্মিনাল প্রকল্পটিতে বছরে ৭ লাখ ৭৫ হাজার টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করার জন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ভাসমান এ টার্মিনালে এক মিলিয়ন টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সূত্রে জানা যায়, দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে বন্দর। ২০১৬ সালে তিন হাজারের বেশি মাদার ভ্যাসেল হ্যান্ডলিং করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। চলতি বছর প্রায় ২৪ লাখ টিইইউস কন্টেইনার এবং প্রায় ৮ কোটি মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করছে চট্টগ্রাম বন্দর। এভাবে চলতে থাকলে আমদানি-রপ্তানি ২০১৯ সালে ২৬ লাখ ৪৬ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে। যা সক্ষমতার চেয়ে দুই লাখ ৬৬ হাজার টিইইউস বেশি। একইভাবে ২০২০ সালে ২৯ লাখ টিইইউস’র বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে বন্দরকে। যা বন্দরের সক্ষমতার চেয়ে পাঁচ লাখ ১১ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার বেশি এবং ২০২১ সালে হ্যান্ডলিংযোগ্য কন্টেইনার দাঁড়াবে ৩২ লাখের কাছাকাছি। যা সক্ষমতার চেয়ে পৌনে আট লাখ টিইইউএস কন্টেইনার বেশি। এই সময়ের মধ্যে এ সী-টার্মিনাল নির্মাণ করা গেলে কন্টেইনার এবং কার্গো হ্যান্ডলিং নিয়ে বন্দরকে বিপাকে পড়তে হবে না।
সী-টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. খালেদ ইকবাল বলেন, বন্দরের বহির্নোঙরে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করার জন্য আমরা আগে থেকে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করেছি। ইতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেন্ট দিয়ে প্রকল্পটির জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি (সমীক্ষা) করছি। সমীক্ষা প্রতিবেদন ইতিবাচক হলেই আমরা দ্রুততম সময়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে প্রকল্পটি শুরু করবো।
তিনি বলেন, অর্থনীতি যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমাদের অবিলম্বে আরও কিছু পোর্ট ও টার্মিনাল করতে হবে। ভারতে দুইশো’র মতো পোর্ট থাকলে আমাদের দেশেও ৮-১০টি বন্দর থাকা দরকার। অথচ আমাদের দেশে সমুদ্র বন্দর রয়েছে তিনটি। আমাদের এ সম্ভাব্যতা কাজগুলো আরো আগেই শুরু করা উচিত ছিল। এতে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া যাবে।
সূত্র:অর্থসূচক